গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে ইসি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ধারিত সময়ের আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার শুরু হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবার সক্রিয়ভাবে মাঠে নামছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে এক অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অসংখ্যা সামাজিকমাধ্যম।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই লাগাম টানতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সভায় মিলিত হচ্ছে কমিশন। আজ সোমবার নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন সেন্টারের (এনটিএমসি) সহযোগিতায় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও দেশে চলমান মোবাইল অপারেটরকে (টেলিটক বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল)।

এ প্রসঙ্গে ইসির একজন মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মোবাইল ফোনের এসএমএসে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিধি ভেঙে আগাম প্রচার, বিদ্বেষ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৬ নভেম্বর বৈঠকে বসবে ইসি। আইন অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে ভোটের প্রচারের সুযোগ না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুককে নানাভাবে নির্বাচনী প্রচারে লাগানো হচ্ছে। এই বৈঠকে এ ধরনের আগাম প্রচার ঠেকানোর প্রক্রিয়া ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বৈঠক করবেন বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুলের মতে, নির্বাচনে অনলাইন বিশেষ করে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীতে নির্বাচনী প্রচার ও খবর আদান প্রদানের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তার মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ করার জায়গা চরমভাবে সংকুচিত হওয়ার কারণে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘সাইবার যুদ্ধ’ প্রথমবারের মতো ব্যাপক আকার ধারণ করে ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে ঢাকার শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা যেভাবে অনলাইন ব্লগ ও সামাজিকমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন তেমনি ফেসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা। ‘বাঁশের কেল্লা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে বিচারের সমালোচনা করা হয় ক্রমাগত। ‘বাঁশের কেল্লা’ ফেসবুক পেজটিকে জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট বলে মনে করা হয়। এরপর থেকে ফেসবুকে নানা ধরনের গ্রুপ তৈরি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা।

আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এসব গ্রুপ থেকে নিজ দলের প্রার্থীদের পক্ষে যেমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিষোদ্গার করতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে। নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণার সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা প্রচারণার বিষয়ও লক্ষণীয় এসব পেজে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলগুলো ফেসবুক পেজের পাশাপাশি টুইটার ও ইউটিউবেও সক্রিয়। এছাড়া তাদের কর্মী-সমর্থকরা ফেসবুকে অসংখ্য পেজ খুলেছেন যেগুলো দলের প্রচার-প্রচারণার কাজ করছে। ‘বিএনপি সমর্থক গোষ্ঠী’, ‘বিএনপি-দেশনায়ক তারেক রহমান’ কিংবা ‘শেখ হাসিনা-মাদার অব হিউম্যানিটি’, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনলাইন ফোরাম’—এ ধরনের বহু ফেসবুক পেজ অনলাইনে দেখা যায়। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মতো বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের ফেসবুকের মাধ্যমে নিজদের প্রচারণার পাশপাশি প্রতিপক্ষের ত্রুটি ও নিজেদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরার নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে যে নিয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে। ক্ষমতাসীন দল মনে করে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফেসবুকে অনেক সক্রিয় এবং সরকারবিরোধী নানা ‘অপপ্রচারে’ লিপ্ত। কিন্তু এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ফেসবুকে ততটা সোচ্চার নয় বলেই দলের শীর্ষ পর্যায়ে ধারণা রয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাইবার ব্রিগেড গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গুজব ছড়ানো প্রতিহত’ করা। এছাড়া নির্বাচনের জন্য ‘সরকারের উন্নয়ন’ প্রচার করা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক লুৎফুল কবির বলেন, সাইবার যুদ্ধ বলতে তো আর প্রথাগত যুদ্ধ বোঝায় না। ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা ও প্রতিপক্ষের ভুল চিহ্নিত করাটাই এর উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ফেসবুক এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে কম সময়ে অনেক মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেসবুকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণা জোরেশোরে শুরু করেছেন। কোন পোস্টে কয়টি লাইক পড়ছে, কতগুলো শেয়ার হচ্ছে—এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে একটি ইমপ্যাক্ট (প্রভাব) তৈরি হয়। যে কারণে প্রার্থী কিংবা সমর্থকরা এটিকে বেছে নিয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইসি,সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম,নিয়ন্ত্রণ,সংসদ নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close