নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ নভেম্বর, ২০১৮

ধুলায় ধূসর ঢাকায় নাকাল নগরবাসী

বর্ষাজুড়ে কাদা-পানি আর খানাখন্দের দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। আর শীত এলেই ধুলার কবলে পড়তে হয় তাদের। গেল বছরের মতো এবারও ঢাকার মূল সড়কে যাওয়া মানেই ধুলা দূষণের মুখোমুখি হওয়া। প্রতিনিয়ত নারী-শিশু, বৃদ্ধ, কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সবাই এ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এতে ব্যাপক হারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

ধুলা-দূষণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে অনেকেই নাকে হাত বা রুমাল দিয়ে চেপে ধরছেন। পাশাপাশি একটু সচেতনরা ব্যবহার করছেন মাস্ক। অন্যদিকে, ধুলায় ঢাকা পড়ছে খাবার হোটেল, ফুটপাতের দোকান, বাসাবাড়ির আসবাব। একইসঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা সংক্রামকও।

রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেলের কাজ। এর খোঁড়াখুঁড়ির প্রভাবে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে এ রাস্তায় বেড়েছে ধুলার উপদ্রব। প্রচ- ধুলায় নাস্তানাবুদ এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে অফিসগামী, স্কুলগামী, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। যদিও ধুলা কমাতে এ অঞ্চলে মেট্রোরেলের কাজে নিয়োজিতরা দিনে দুইবার পানি ছিটান। তারপরও কাজ হয় না বলে মনে করা হচ্ছে। আর ধুলার একই অবস্থা উত্তরা হাউস বিল্ডিং থেকে দিয়াবাড়ীর রাস্তা পর্যন্ত। তবে মেট্রোরেলের কাজের প্রভাব বেশি পড়েছে দিয়াবাড়িতে। এ অঞ্চলে ধুলা বেড়েছে ভয়াবহ আকারে।

খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এখন ধুলার সঙ্গেই চলতে হচ্ছে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর অঞ্চলের লোকজনকে। সেইসঙ্গে রামপুরা, নয়াপল্টন, পল্টনেও ধুলায় ধূসর হচ্ছে সবাই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাস্তা সংস্কারের কারণে নতুন করে ধুলার এলাকায় পরিণত হয়েছে মালিবাগ, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ অঞ্চল। এখানে গাড়ি চলাচলের সঙ্গে উড়ছে প্রচ- রকমের ধুলা। আর এর দূষণের শিকার হচ্ছে পথচারীরা। আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি, থাকেন মিরপুর শেওড়াপাড়ায়। তিনি বলেন, রাস্তায় বের হওয়া মানে ধুলার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলাফেরা করা। মাস্কও কাজ করছে না। এ ছাড়া রাস্তার পাশে বাসা হওয়ায় জানালা খোলা থাকলেই ঢুকছে ধুলা। নোংরা হচ্ছে আসবাব, পোশাক।

ধুলায় ধূসর রং ধারণ করেছে ফুটপাতের দোকান ও খাবার হোটেল। এতে বিক্রিও কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া খাবার খেয়ে বা পথে চলতে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকে।

আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি পল্টন এলাকায় ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আগে পিঠা নিতে অনেক ভদ্র পরিবার আসত, ক্রেতারা গাড়ি থামিয়ে পিঠা কিনতেন, বিক্রি ভালো ছিল। আর এখন রাস্তার ধুলার কারণে তেমন ক্রেতা পাওয়া যায় না। ফুটপাতে চলাচলকারীরাই এখন মূল ক্রেতা।

ধুলার সৃষ্টি যেভাবে : মেট্রোরেলের উন্নয়নে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ভবন নির্মাণের মাটি, বালু, সিমেন্ট, পাথর, নুড়ি পাথর, কংক্রিট যত্রতত্র রাখা, রাস্তা সংস্কারের দ্রব্য রাস্তার ওপর রেখে দেওয়া ইত্যাদি। আবার রাস্তা দখল করে ভবনের বর্জ্য মাসের পর মাস ফেলে রাখায় সেখান থেকে পদপিষ্ট হয়ে ধুলার সৃষ্টি হয়। অনেক জায়গায় রাস্তার পাশের ড্রেনেজের ময়লা জমিয়ে রাখায় তা রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে। এসব ময়লা রাস্তায় ছড়িয়ে ধুলায় পরিণত হয়ে দূষণের সৃষ্টি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধুলা দূষণের কারণে ঢাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে নানা সংক্রামক ব্যাধি। শীতকালে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের সমস্যাসহ ফুসফুসে ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ধুলা দূষণের কারণে নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে নগরবাসীদের। তাছাড়া দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ধূলা,ধূসর ঢাকা,ঢাকার পরিবেশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close