নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ নভেম্বর, ২০১৮

‘উন্নয়ন পরিকল্পনায় ভারসাম্যের অভাব রয়েছে’

‘দেশে অর্থনৈতিক অগ্রসর দ্রুতই বাড়ছে। একইসঙ্গে অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য দেশে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা যথাযথভাবে গ্রহণের মাধ্যমে এ অবস্থার দ্রুত উন্নতি সম্ভব। কিন্তু যথাযথ নীতি ও আইন প্রয়োগ না হওয়ায় পরিকল্পনার কাঙ্ক্ষিত প্রসার এখনও সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক ভারসাম্যের অভাব উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।’

শুক্রবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে ‘নির্বাচনী ইশতেহারে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক বিআইপির প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স’র (বিআইপি) পক্ষ থেকে দেশের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এম আবুল কালাম সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন— ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপি’র পক্ষে প্রস্তাবনাগুলো উপস্থাপন করেন পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

পরিকল্পিত উন্নয়নে সামগ্রিক পদক্ষেপ— দেশের আয়তনের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা, অধিক জন-ঘনত্ব এবং অধিক জনসংখ্যা বাড়ার কারণে এদেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতি বছর দেশে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমি অপরিকল্পিতভাবে অকৃষিজ খাতে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।

একদিকে যেমন শিল্পায়ন প্রয়োজন অন্যদিকে দেশের বনাঞ্চল, জলাভূমি, হাওড়, বিল, পাহাড়ের ন্যায় সংবেদনশীল এলাকা সংরক্ষণও দরকার। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সারাদেশের ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই।

পরিবহন ও যাতায়াত— নগর জীবনে যানজট একটি সংকটময় পর্যায়ে রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বৃহৎ নগরগুলোতে এর প্রকোপ অধিক মাত্রায় বিরাজমান। এজন্য বহুমাত্রিক গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পথচারীবান্ধব সুবিধা তৈরী ও বাসভিত্তিক ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। জলপথ ও রেলপথ ব্যবহারের সুযোগকেও প্রাধান্য দিতে হবে।

পরিবহন খাতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। পরিবহন খাতে এ দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। পরিবহন অবকাঠামোর সুপরিকল্পিত উন্নয়নের পাশাপাশি সকল পরিবহন চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন— নগর জীবনে দরিদ্র ও নিন্মআয়ের জনগোষ্ঠী অর্থনীতিতে বৃহৎ অবদান রাখছে। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর জন্য নগর এলাকায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আবাসন সৃষ্টি করা জরুরী। এক্ষেত্রে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আবাসন নির্মাণ প্রক্রিয়া ও প্রকল্প নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠিকে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রসর হওয়া দরকার। সামাজিক আবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন আয়শ্রেণির মানুষের জন্য নগর এলাকায় সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও কর্মসংস্থান— দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শহর পরিকল্পনার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে পরিকল্পিত উপায়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের প্রতি জোর দিতে হবে। শহরে ক্রমবর্ধমান মানুষের জন্য কর্মসংস্থান বাড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

পরিসেবার পরিকল্পিত সুষম উন্নয়ন— ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা জড়িত। নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসমূহের সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারি অর্থের ব্যাপক অপচয় হয়, জনদুর্ভোগ বাড়ে এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যাহত হয়। সমন্বিত ও কার্যকরী পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ‘নগর সরকার’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সংস্থাসমূহকে নগর সরকারের অধীনে আনতে হবে। বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন— দেশের অসংখ্য স্থানীয় সরকার সমূহকে নিজ নিজ এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ উদ্যোগ গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিকল্পনা অনুশীলনের উপর গুরুত্বারোপ— দেশের বর্তমান বাস্তবতায় পরিকল্পনা অনুশীলনের গুরুত্ব ও সম্প্রসারন ছাড়া দেশে পরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যবস্থা টেকসই করা সম্ভব নয়। চূড়ান্ত বিবেচনায় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন এবং মধ্যম ও উন্নত আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ের মহাপরিকল্পনা সমূহের বাস্তবায়নে পরিকল্পনা অনুশীলনে যথাযথ গুরুত্বারোপ প্রয়োজন।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উন্নয়ন,পরিকল্পনা,ভারসাম্য
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close