হাসান ইমন

  ০৬ নভেম্বর, ২০১৮

সড়ক সংস্কার : এখনো শুরুই করতে পারেনি ২ সিটি

নতুন করে আরো ৪০০ কিলোমিটারে হাত

বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও সড়ক সংস্কারের কাজ এখনো শুরু করতেই পারেনি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এসব বেহাল সড়কের কারণে নগরীতে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অন্যদিকে সংস্থা দুটিতে এখনো পুরনো প্রকল্পের কাজ চলছে। এদিকে, কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিও পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর। কথা ছিল বর্ষা মৌসুম শেষ হলে এসব সড়ক সংস্কারে হাত দেবে দুই সিটি করপোরেশন। বর্ষা শেষ হয়েছে তিন মাস হলো। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অনিয়মিত বৃষ্টিও নেই। সড়কগুলো এখন শুকনো খটখটে। অথচ দুই সিটি করপোরেশনের কেউ-ই সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেনি। অথচ বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই পুরনো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

দুই করপোরেশন সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণে চলছে শেষ মুহূর্তে সড়ক সংস্কারকাজ। একই সঙ্গে ফুটপাত ও ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। এর মধ্যে ডিএসসিসি ২৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এখনো চলছে ৬০ কিলোমিটার সড়ক ও ২০ কিলোমিটার ফুটপাত সংস্কারকাজ। অন্যদিকে ডিএনসিসির ২৫০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের পরিকল্পনা থাকলে ইতোমধ্যে তারা কাজ শেষ করেছে। তবে এখনো ইমপ্রুভমেন্ট অব ড্রেন অ্যান্ড ইম্প্রুভমেন্ট অব রোডস অ্যান্ড ফুটপাতের (আইডিআইপি) প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পটির ৫০ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া এবার বর্ষায় দুই সিটিতে ৪০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসিতে ২০০ ও ডিএনসিসিতে ২০০ কিলোমিটার সড়ক। এসব সড়ক সংস্কারে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য দুই সিটি করপোরেশন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হলে কাজ শুরু করতে পারবে সংস্থা দুটি। সরেজমিনে গিয়ে ডিএসসিসির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণের মধ্যে পল্টন, খিলগাঁও, শাজাহানপুর, বাসাবো, আর কে মিশন রোড, পিলখানা, ইসলামবাগ, কমলাপুর, ফকিরাপুল ও বনশ্রী এলাকায় ৬০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এবারের বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ডিএসসিসির ২০-২৫ শতাংশ রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে কিছু সড়ক সংস্কার হবে। বাকিগুলো সংস্কারের জন্য থোক বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই কাজ শুরু করতে পারব।’

এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ডিএসসিসিতে এখন ৬০ কিলোমিটার সড়ক ও ২০ কিলোমিটার ফুটপাত সংস্কারের কাজ চলছে। এগুলোর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তরে পুরনো প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও আইডিআইপি প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মেগা প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি অঞ্চলে ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইম্প্রুভমেন্ট অব ড্রেন অ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট অব রোডস অ্যান্ড ফুটপাতের (আইডিআইপি) ৬২টি প্যাকেজের কাজ শুরু করে ডিএনসিসি। এর মধ্যে প্রথম পর্বে ২৬টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৩৬টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে; যা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রকল্পের মাত্র ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ না শেষ হলেও কিছু কাজ বাকি থাকতে পারে। এ ছাড়া গত বর্ষা মৌসুমে ডিএনসিসির ২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সংস্কারের জন্য প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে এলে কাজ শুরু হবে।

এসব বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এবারে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ডিএনসিসির ২০ শতাংশ রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কারের জন্য প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অন্যদিকে আইডিআইপি প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ না শেষ হলে অতিরিক্ত ১-২ মাস সময় লাগবে।

দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজধানীতে ২ হাজার ২৮৯ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসির আওতায় প্রায় এক হাজার কিলোমিটার ও ডিএনসিসির রয়েছে ১ হাজার ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের এলাকায় এবার ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক নষ্ট হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সড়ক সংস্কারের চিত্র বলছে, প্রতি বছর সংস্কারযোগ্য সড়কের পরিমাণে তেমন হেরফের হচ্ছে না, বরং প্রতি বছরই বরাদ্দ বাড়ছে। গত বছর দুই সিটি করপোরেশন ৫০০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করেছে। চলতি বছর ৪০০ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরে দুই সিটির সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা।

সময়মতো সংস্কার না করায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো এখন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের কার্পেটিং উঠে খানাখন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি শিকার হচ্ছে পথচারীরা। বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে অনেক সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অধিকাংশ সড়কে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও এসব সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খানাখন্দ,ভোগান্তি,ঢাকা,সড়ক সংস্কার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close