নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

বাস-ট্রাক চালক ও হেলপারের তথ্য ঝুলবে কবে?

রাজধানী ঢাকাসহ দেশে গণপরিবহনগুলোর দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও চালকের সহকারীদের (হেলপার) ছবিসহ নাম, লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর লাগানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণপরিবহনে যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যাত্রী হয়রানিসহ যে কোনও দুর্ঘটনা রোধ এবং ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বি আরটিএ) পাশাপাশি এ কাজে যুক্ত রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও। কিন্তু কিছুতেই কোনও উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পরিবহন মালিকরা সরকারের কোনও সিদ্ধান্তকেই তোয়াক্কা করছে না। ফলে সড়কে কোনও দৃশ্যমান পরিবর্তন আসছে না।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীর গণপরিবহনগুলোয় যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যাত্রী হয়রানিসহ নানা আপত্তিকর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। নানা কারণে এসব অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে পারছেন না ভূক্তভোগীরা। জানানো হলেও যথাযথ প্রমাণ না পাওয়ায় ব্যবস্থাও নিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ইতিবাচক প্রচারণা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, মামলা দায়ের ও সাজা দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েও কোনোভাবেই শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না গণপরিবহনে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে সব গণপরিবহনের জন্য এমন নির্দেশনা জারি করে বি আরটিএ।

গত ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ বিষয়ক এক সভায় গণপরিবহনে (বিশেষত বাসে) দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক এবং হেলপারের ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স নম্বর,মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরদিন ২৮ আগস্ট বিষয়টি অবহিত করে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে পত্রের কোনও কার্যকর তথ্য পায়নি বিআরটিএ। পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচ কার্যদিবস সময় দিয়ে আবারও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত ১৭ অক্টোবর বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিন) নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেড়ারেশন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নকে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়,‘গণপরিবহনে (বিশেষত বাসে) দৃশ্যমান দুটি স্থানে ড্রাইভার এবং হেলপারদের ছবিসহ নাম এবং ড্রাইভারের লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হয় কিন্তু সপ্তাহান্তে এ বিষয়ে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।

কিন্তু অদ্যাবধি উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক কোনও কার্যক্রম অবহিত না করায় এ অথিরিটির (বি আরটিএ) কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ অবস্থায় পত্রপ্রাপ্তির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য এ অথরিটিকে জানানোর জন্য নির্দেশ ক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন পরিদর্শন করে দেখা গেছে শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান বি আরটিসি মালিকানাধীন কয়েকটি বাসে এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলেও বেসরকারি কোনও গণপরিবহনেই সে নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। আগের মতোই সব পরিবহন পরিচালিত হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যেও এ বিষয়ে কোনও সচেতনতা নেই।

জানতে চাইলে বিআরটিসি সচিব মো.নূর-ই-আলম বলেন,কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের বাসগুলোর দৃশ্যমান স্থানে চালক ও হেলপারদের বৃত্তান্ত লাগিয়ে দিই। আমাদের কোনও বাসে বিষয়টিকে অবহেলা করা হচ্ছে না।

সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, গণপরিবহনের মালিক, চালক ও চালকের সহকারীদের (হেলপার)কাছে তারা অনেকটাই জিম্মি। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়সহ চলন্ত গাড়িতে যাত্রী হয়রানি থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। কিন্তু, কোনও নারী বা সাধারণ যাত্রী এমন পরিস্থিতির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকার পাওয়ার মতো কোনও মাধ্যম তারা পাচ্ছে না। এজন্য বিভিন্ন সময় যাত্রী সংশ্লিষ্ট সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে সরকারের কাছে নানা দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিতে যাচ্ছে সরকার।

জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকার অনেক সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আর এর কিছুই বাস্তবায়ন দেখছি না। মালিকপক্ষের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণেই সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মালিকরা এসবকে তোয়াক্কা করছে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানি খন্দকার বলেন, আসলে ঢাকা শহরে এটা বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ,আমাদের যেসব স্টাফ রয়েছে তারা আজ আছে কাল নেই। তাহলে একটা চালক বা হেলপারের জীবন বৃত্তান্ত কতোবার পরিবর্তন করবো? এর পরেও আমরা কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও বৈঠকে মালিকদের তাগিদ দিচ্ছি।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পরিবহন শ্রমিক,গণপরিবহন,পরিবহন শ্রমিকদের তথ্য
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close