reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরো জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে আগামীতে এই অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরো জোরদার করার উপায় উদ্ভাবন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, সমুদ্র নিরাপত্তা আমাদের জন্য অতীত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী তাদের জীবন-জীবিকার জন্য সমুদ্র সম্পদের উপর নির্ভরশীল।

বুধবার হোটেল রেডিসন ব্লু’তে চতুর্দশ ‘হেডস অব এশিয়ান কোস্ট গার্ড’ (হ্যাকগাম)-এর উচ্চপর্যায়ের সভার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন। এছাড়াও ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এশীয় অঞ্চলে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ রাখবে—এটাই আমার প্রত্যাশা। এজন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব। আমি আশাবাদী এই সভার মাধ্যমে এশীয় অঞ্চলের সকল কোস্ট গার্ড ও মেরিটাইম সংস্থার প্রধানরা অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরো জোরদার করার উপায় উদ্ভাবন করতে পারবেন। কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দুরূহ কাজে নিয়োজিত থাকেন উল্লেখ করে বলেন, এ সভার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলি তাদের সমুদ্রসীমা আরো নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম দেশের সমুদ্রের গুরুত্ব অনুধাবন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি সমুদ্রে ও সমুদ্রসম্পদে জনগণের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৪ সালে ‘দি টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোন্স অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন। একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের প্রক্রিয়াও শুরু করেন। সে সময় মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে ‘আনক্লস’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে এদেশের জনগণের অধিকার রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে এদেশের মানুষের নানাবিধ স্বার্থ জড়িত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গোপসাগরের অপর দুই অংশীদার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারিত না থাকায় বিগত চার দশক যাবত আমরা সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। জেলে সম্প্র্রদায় মৎস্য আহরণে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আমাদের মৎস্যসম্পদ অন্য দেশের জেলেরা অবাধে শিকার করেছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে তার সরকার ২০০১ সালে ‘আনক্লস’ অনুসমর্থন করে এবং এর মধ্যে দিয়ে সমুদ্রে আমাদের ন্যায্য অধিকারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনক্লজ অনুসমর্থনের পর ১০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে মহীসোপানের দাবি জাতিসংঘের কাছে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু ২০০৮ সাল পর্যন্ত সে কাজ সম্পন্ন হয়নি। তিনি বলেন, ২০১০ সালের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরে আমরা একটি সিসমিক জরিপ সস্পাদন করে এ সংক্রান্ত সকল আইনগত ও কারিগরি বাধ্যবাধকতা শেষ করি ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার সরকার জাতিসংঘে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরেও আমাদের মহীসোপানের দাবি পেশ করে। তিনি বলেন, দীর্ঘ শুনানির পর ২০১২ সালের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনবিষয়ক ট্রাইবুনাল আমাদের পক্ষে রায় দেয়। বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়। এরফলে বঙ্গোপসাগরের প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিশাল জলরাশির তলদেশে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এ সম্পদ আমরা উত্তোলন করতে সক্ষম হলে আগামী কয়েক প্রজন্ম লাভবান হবে। এ সম্পদের নিরাপদ ও পরিবেশগতভাবে টেকসই উত্তোলন বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সমুদ্র পরিবহনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এ সামুদ্রিক এলাকায় মাদকদ্রব্য পাচার, অবৈধ অস্ত্র পাচার, মানব পাচার, অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ, জলদুস্যতা, সশস্ত্র ডাকাতি এবং আরো বিভিন্ন রকম অবৈধ কার্যকলাপ সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অপরাধীরা জড়িত। বলেন, অপরাধীরা অনেক সময় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। কাজেই একক দেশের পক্ষে এদের দমন করা সম্ভব নয়। একমাত্র সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এ সকল কর্মকানণ্ড দমন করতে।

তিনি বলেন, ‘হ্যাকগাম’-এর মতো একটি সংগঠনই পারে আমাদের সকলের অভিজ্ঞতা ও তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে দলগতভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে এসব সামুদ্রিক অপ-তৎপরতা রোধ করে একটি নিরাপদ সমুদ্রসীমা উপহার দিতে। তার সরকারের সময়ে দেশের আর্খসামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, এ সময়ে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে যা সর্বশেষ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ এই সময়ে স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ড সরকারের সহযোগিতায় তার সরকার ‘ডেল্টা ২১০০’ নামে একটি দীর্ঘ-মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে মধ্য-এবং দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্যগুলোকে সমন্বয় করে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদে আমাদের উত্থাপিত একটি বিলের মাধ্যমে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় বিরোধীদলে থাকাবস্থায় আমরা এ বিলটি উত্থাপন করেছিলাম। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র সংস্থা যা বিরোধীদলের উত্থাপিত বিল পাশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাংলাদেশের উপকূলীয় ও সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। একটি অপেক্ষাকৃত নতুন বাহিনী হওয়া সত্ত্বেও তারা দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা প্রদান এবং দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে যথেষ্ট সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এশীয় অঞ্চলে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ রাখবে—এটাই আমার প্রত্যাশা। এজন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রধানমন্ত্রী,সামুদ্রিক নিরাপত্তা,শেখ হাসিনা,হ্যাকগাম,কোস্ট গার্ড
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close