গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

স্মার্টকার্ড তৈরিতে বিরোধ!

ওবারথার পেছনে ইসির গচ্চা সাড়ে ১৪ মিলিয়ন ডলার

স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণে ব্যর্থ ফ্রান্সের ওবারথা টেকনোলজি কোম্পানির দায় মেটাতে এখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গচ্চা দিতে হবে ১৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এ সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসায় মোট অর্থের জোগান লাগবে ৩২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা টাকার অংকে ২৭৩ কোটি টাকা। প্রকল্পে অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিশ^ব্যাংক কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ায় পুরো দায় বর্তিয়েছে সরকারের ওপরে। এত বিপুল অর্থ অন্য কোনো খাত থেকে সংকুলান না হলে জিওবির তহবিল থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে। আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যাসিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) প্রকল্পের এক নথিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণে ব্যর্থতার জন্য এরই মধ্যে ওবারথাকে আইডিয়া প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থতার জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রকল্পের অমীমাংসিত কিছু ইস্যুতে উভয় (ইসি ও ওবারথা) পক্ষের দেনা-পাওনা অনিষ্পন্ন থাকায় ইআরডির সহায়তা সমাধানের কার্যক্রম চলছে। এর আগে আরবিটেশনের মাধ্যমে কিছুটা বিরোধ মীমাংসা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্মার্টকার্ডের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ইসি ও ওবারথা উভয় পক্ষের অনিষ্পন্ন বিরোধগুলো মিটিয়ে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পরস্পারিক আলোচনা ও সভা হয়েছে। এসব সভায় উভয় পক্ষের কিছু দেনা-পাওনার বিষয়টি সামনে চলে আসে। প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া ওবারথার কাছে কিছু অপরিহার্য দায় চাপে; যার পারসু মেশিন রক্ষণাবেক্ষণে কারিগরি সহায়তা, অবিতরণ করা ১২.৭ মিলিয়ন স্মার্ট ব্লাঙ্ক কার্ড ইসিকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এসব অমীমাংসিত বিষয়গুলো কোন প্রক্রিয়ায় সমাধান সম্ভব বর্তমানে এ নিয়ে চলছে দেনদরবার।

এরই মধ্যে স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ সংক্রান্ত চুক্তির ফোরজি প্যাকেজের আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আজমালুল হোসাইন কিউসি উভয় পক্ষের দেনা-পাওনা মীমাংসার বিষয়ে সব নথি পর্যালোচনা করে একটি মতামত দিয়েছেন। এতে ওবারথার সব করণীয় যথাযথ প্রতিপালন সাপেক্ষে কোম্পানির পাওনা ১৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধে মতামত রয়েছে।

এদিকে, চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের অর্থসহায়তাকারী সংস্থা বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্মার্টকার্ডের নিরাপত্তাজনিত (ডুপ্লিকেট ও অলিপিবদ্ধ কার্ড) সমস্যা এবং অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় বিশ^ব্যাংকের অর্থ ব্যবহার করে ওবারথা টেকনোলজির পাওয়া পরিশোধ করতে পারেনি সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এরই মধ্যে ওবারথার পাওয়া পরিশোধে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে অর্থ ব্যবহারের সময়সীমা বাড়াতে বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে দেনদরদার চালিয়ে ব্যর্থ হয় আইডিয়া প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কারণ বিশ^ব্যাংক মেয়াদোর্ত্তীণ প্রকল্পে অর্থছাড়ে অপারগতা প্রকাশ করে।

বিশ^ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের পর লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের মতামত ও ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওবারথা টেকনোলজির কাছ থেকে পারফরম্যান্স গ্যারেন্টি (পিজি) এবং অ্যাডভ্যান্স পেমেন্ট গ্যারেন্টি (এপিজি) নগদ বাবদ প্রাপ্ত ১৬.৯১ (এপিজি ৮.৭৫ মিলিয়ন ও পিজি ৮.১৬) মিলিয়ন ডলার দ্বারা ওবারথার পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়।

উল্লেখ্য, ওবারথা টেকনোলজির পাওয়া পরিশোধে পিজি ও এপিজির অর্থ ব্যবহার করা না গেলে পাওনার সমুদয় অর্থ (বিরোধ নিষ্পত্তি সাপেক্ষে) জিওবি থেকে বরাদ্দ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই অর্থের পরিমাণ ১৪.৫৫ মিলিয়ন ইউএসডি থেকে ৩২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা টাকার অংকে প্রায় ১২৩ কোটি থেকে ২৭৩ কোটি টাকা হবে।

প্রসঙ্গত, কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণে প্রত্যাশার কাছাকাছি না পৌঁছানোয় ওবারথার সঙ্গে ইসির সম্পর্কে ছেদ পড়ে। পরে সরকারি অর্থায়নে আইডিয়া প্রকল্পের নিজস্ব জনবল দিয়ে স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ কার্যক্রম চলছে। জানা গেছে, ওবারথা যেখানে দৈনিক ১০ থেকে ২০ লাখ কার্ড পারসোনালাইজেশন করতে পারত সেখানে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ সংস্থার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি উৎপাদন করছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের সবার হাতে পৌঁছে যাবে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন স্মার্টকার্ড, এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করছে ইসি। পরে ১ কোটি ৪০ লাখ বাকি সব ভোটার নাগরিকের হাতে এ কার্ড পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নেবে ইসি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ওবারথার,ইসি,বিরোধ,নির্বাচন কমিশন,স্মার্টকার্ড
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close