প্রতীক ইজাজ

  ১৪ আগস্ট, ২০১৮

অতিরিক্ত ৬ স্টিমার ও ১৮ লঞ্চ

সাধারণ মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এবারও নৌপথে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। যাত্রীর চাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তায় বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বিশেষ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নৌপথে নামানো হয়েছে অতিরিক্ত লঞ্চ ও স্টিমার। ঈদের ১০ দিন নৌপথে সব ধরনের বালুবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকছে। লঞ্চে মাঝ নদী থেকে যাত্রী নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিয়ম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টার্মিনালগুলোতে অতিরিক্ত লঞ্চ থাকবে। প্রয়োজন হলেই যাত্রী তোলা হবে সে সব লঞ্চে।

বিশেষ করে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, ছাদে যাত্রী ওঠানো, লঞ্চের ফিটনেসসহ নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা। তারা জানান, এসব কাজে বিশেষ কর্মী বাহিনী থাকছে। এসব কর্মী নৌপথে যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন, সে দিকগুলোও খেয়াল রাখবেন।

তবে নৌ কর্তৃপক্ষের এসব সতর্কতা উপেক্ষা করে পুরনো লঞ্চগুলো রং করে এবারও নৌপথে নামানোর প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গাপারের ডকইয়ার্ডগুলোয় চলছে পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চগুলোর মেরামত ও রং করার কাজ। ফলে নৌপথে এবারও ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রার আশঙ্কা করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে ৪-৫ বছর আগে যেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো, এখনো ঠিক তেমনটাই চলছে। এগুলো কোনো কাজে আসে না, তা আগের ঈদযাত্রাগুলোর দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারছি না, যে কারণে প্রতি ঈদেই যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসে, নৌপথে তদারকি কমতে থাকে। প্রয়োজনীয় লঞ্চ ও সার্ভিসের অভাবে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। তিনি জানান, এর আগে সর্বশেষ ঈদুল ফিতরে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৩৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪০৫ জন নিহত এবং ১২৭৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হন।

বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় নৌযান সংস্থা বিআইডব্লিউটিসির বিশেষ সার্ভিস শুরু হবে ১৬ আগস্ট। বেসরকারি নৌযানের বিশেষ সার্ভিস শুরু হবে ১৯ আগস্ট। এবার বিশেষ ঈদ সার্ভিসে বিআইডব্লিউটিসির ৬টি স্টিমার থাকবে। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ ঈদ সার্ভিস চলাকালে প্রতিদিন বেসরকারি ১৮টি লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রী পরিবহন করবে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল অফিসের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, তাদের বিশেষ ঈদ সার্ভিস ১৬ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। বিশেষ সার্ভিসের জন্য রয়েছে সংস্থার ৫টি জাহাজ—পিএস লেপচা, পিএস মাহসুদ, পিএস অস্টিচ, এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙ্গালী প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া পিএস টার্ন ডকইয়ার্ডের মেরামত শেষ। ১৬ ও ২০ আগস্ট ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে এবং ২৫ আগস্ট বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে দুটি জাহাজ ছাড়বে। অপরদিকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে বিশেষ সার্ভিস চলাকালে ঈদের আগে ঢাকা থেকে প্রতিদিন ১৮টি লঞ্চ ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া বরিশাল থেকে ঈদের পরবর্তী ৭ দিন একই সংখ্যক লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

বিআইডব্লিউটএর যুগ্ম পরিচালক এবং সদরঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের বালুবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা, সদরঘাটস্থ কাউন্টারে লঞ্চের ডেকের যাত্রীদের জন্য টিকিট বিক্রি শুরু করা, যাত্রীদের উপস্থিতির ওপর ভিত্তিকরে ১৫ আগস্ট থেকে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ সামাল দিতে ও পন্টুনে অতিরিক্ত যাত্রী যেতে না পারে এ জন্য টারমিনালগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার এবং বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য গজারিয়া এলাকায় একটি ক্যাম্প করা হয়েছে। এ নিয়ম না মানলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সবকিছুর দেখভাল করতে ঈদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটির কর্মকর্তারা জানান, এলাকাভিত্তিক লঞ্চ ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালের লঞ্চ থাকবে ও ছেড়ে যাবে ১, ২ ও ৩ নম্বর গ্যাংওয়ে থেকে, হুলারহাট-ভান্ডারিয়াগামী লঞ্চ ৫ ও ৬ নং গ্যাংওয়ে, ঝালকাঠি মাদারিপুর- ৪ নম্বর গ্যাংওয়ে, রায়েন্দা, গোমা, মুলাদি, ভাষাণচর ৭ নম্বর গ্যাংওয়ে, সবুজবাগ, আমতলী, পয়সার হাট, বরগুনা ৮ নম্বর গ্যাংওয়ে, লালমোহন, বেতুয়া, কালাইয়া ৯ নম্বর গ্যাংওয়ে, হাতিয়া, মাস্টার হাট, দৌলত খাঁ ১০ নম্বর গ্যাংওয়ে, বোরহানউদ্দিন, পাতার হাট, ভোলা, ১১ নম্বর গ্যাংওয়ে, ভোলা লেতরা, ঘোষের হাট ১২ নম্বর গ্যাংওয়ে, রাঙ্গাবালী, টরকী ১৩ নং গ্যাংওয়ে, সুরেশ্বর, ওয়াপদা, দুবলার চর বালাবাজারগামী লঞ্চ ১৩ নম্বর গ্যাংওয়ে, গ্রিন লাইন (ডে সার্ভিস) চাঁদপুরগামী লঞ্চ, এবং বিআইডব্লিইটসির রকেট স্টিমার লালকুঠি ঘাটে বার্দিং করবে এবং ছেড়ে যাবে। এ ছাড়াও পটুয়াখালী ও গলাচিটার লঞ্চ থাকবে ওয়াইজ ঘাটের গ্যাংওয়েতে। শুধু ঈদের যাত্রী যাওয়ার জন্যই নয়, ফিরে আসার সময়ও যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এ জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদযাত্রা,নৌপথ,লঞ্চ ও স্টিমার,বিআইডব্লিউটএ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close