বিশেষ প্রতিনিধি

  ১১ আগস্ট, ২০১৮

বাঙালি সভ্যতার নতুন রূপকার

শহরের মোড়ে, প্রধান সড়কে, অলিগলিতে উঠছে শোকতোরণ। সকাল থেকে মধ্যরাত বাজছে শোকগাথা। তার সুরে, তালে, উচ্চারণে ভাসছে ছোপ ছোপ লাল সাদা কালো। মানুষ হাঁটছে। সঙ্গে হাঁটছেন কালো তোরণ থেকে বেরিয়ে কতগুলো চেনামুখ, স্বজন, পরমাত্মীয়। এক দিন এই মুখগুলোই তো সাহস জুগিয়েছে বাঙালিকে—পথে, সংগ্রামে, সংকটে। কালো ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে হাসছে যে উজ্জ্বল চোখের দ্যুতি, এক দিন তার আঙুল ধরেই তো পথে নামা বাঙালি। এক দিন তিনি ডাক দিয়েছিলেন বলেই সাহসে বুক বেঁধে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মানুষ। এনেছিল স্বাধীনতা। তারপর বুকে টেনে নিয়েছিল পরম নিশ্চিন্তে, চির বাঁধনে, ঘরের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

বঙ্গবন্ধুই তো বাঙালি জাতির জনক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি ও সভ্যতার নতুন রূপকার, রচয়িতা। বাঙালির সঙ্গে তার বন্ধন চিরদিনের, চিরতরের। গল্পে, উল্লাসে, উৎসবে-বঙ্গবন্ধুই তো পারেন কেবল বাঙালির ভেতরকার সন্ধান দিতে। বঙ্গবন্ধুই তো কেবল পারেন রাষ্ট্রের জন্য, মানুষের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, এমন করে পরিবারসুদ্ধ মানুষকে পাঠাতে রণক্ষেত্রে, মৃত্যুর মুখে। দেশ স্বাধীনের পর, স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে, তাই তার কাছেই তো ছিল বাঙালির সবচেয়ে বেশি চাওয়া, প্রত্যাশা। কিন্তু তা হলো না। এ দেশীয় কিছু ক্ষমতালোভী সেনা কর্মকর্তা এই আগস্টেই একরাতে সপরিবারে হত্যা করল বঙ্গবন্ধুকে। মুছে দিতে চাইল চিরতরে। হলো না তাও। উল্টো বাঙালি বুকে চির আসনে বসলেন বঙ্গবন্ধু—ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়, বেদনায়।

জেল-জুলুম কিংবা মৃত্যুভয়—কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটাতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকে। পারেনি সরিয়ে নিতে বাঙালির কাছ থেকে। কারণ পুলিশি ভয় কিংবা জেলের অভিজ্ঞতা তো তার সেই স্কুলজীবনেই। ১৯৩৮ সালের ঘটনা। গোপালগঞ্জে তখন হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে একটু আড়াআড়ি চলছিল। মার্চ বা এপ্রিলের কোনো এক দিন, বঙ্গবন্ধুর এক সহপাঠী আব্দুল মালেককে ধরে নিয়ে যায় হিন্দু মহাসভা সভাপতি সুরেন ব্যানার্জি তার বাড়িতে। মারপিট করে। খবর পেয়ে দলবল নিয়ে সে বাড়িতে ছোটেন বঙ্গবন্ধু। ঘোষণা দেন—‘ওকে ছেড়ে না দিলে কেড়ে নেব’। পুলিশ আসে। বাধ্য হয়ে দরজা ভেঙে, মারপিট করে ছাড়িয়ে আনেন মালেককে।

বঙ্গবন্ধুর দলের সঙ্গে হিন্দু মহাসভার লোকজনের মারপিটের ঘটনায় গোপালগঞ্জ শহরে খুব উত্তেজনা দেখা দেয়। পরদিন রাতে হিন্দু নেতারা থানার হিন্দু অফিসারদের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করেন বঙ্গবন্ধুসহ তার দলের লোকজনদের বিরুদ্ধে। বাড়ি এলেন দারোগা। বাবাকে ছেলে বঙ্গবন্ধুর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখালেন। বাবা বললেন, নিয়ে যান। লজ্জায় পড়লেন দারোগা। পরে নিজেই ছেলেকে পাঠালেন থানায়। সেখান থেকে কোর্টে চালান। জামিন হলো না। অন্য অনেকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকেও পাঠানো হলো জেলহাজতে। সাবজেল, একমাত্র ঘর। কোনো মেয়ে না থাকায় তাকে রাখা হলো মেয়েদের ওয়ার্ডেই। বাড়ি থেকে এলো বিছানা, কাপড় ও খাবার। অবশেষে সাত দিন পর জামিন মিলল। কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধু। বিশাল এই মানুষটির জীবনে কারাগারের প্রথম স্মৃতি হয়ে রইল সেটিই, সেই স্কুলজীবনের কারাগারের সাতটি দিন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাঙালি সভ্যতা,রূপকার,বঙ্গবন্ধু,জাতির জনক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close