নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ জুলাই, ২০১৮

রাজধানীজুড়ে রিকশার দৌরাত্ম্য বাড়ছেই

ইচ্ছামতো চলাচল, যত্রতত্র পার্কিং ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ কোনো কিছুতেই জবাবদিহিতা নেই রিকশা চালকদের

ঢাকার রাস্তায় আতঙ্কের এক নাম যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক রিকশা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো প্রশিক্ষণ এবং নিবন্ধন না থাকায় উল্টো চলাসহ ট্রাফিক আইন না মানা এসব বাহনের কারণে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি বেড়েই চলছে রাজধানীর সড়কে। এদিকে লাইসেন্স না থাকা, ইচ্ছামতো চলাচল, যত্রতত্র পার্কিং, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ কোনো কিছুতেই জবাবদিহিতা নেই সহজলভ্য এ বাহনটির। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এদের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হলেও ভাড়ার ব্যাপারে দেয়া হচ্ছে না কোনো নীতিমালা। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় রাজধানীর রাস্তায় চলাচলকারী গাড়িগুলো বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। তাছাড়া মানবিকতার কথা বলে গত ২৮ বছর ধরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগেই শ্রমিক সংগঠনগুলো অবৈধভাবে নেমপ্লেটে নম্বর দিয়ে রাজধানীতে রিকশা চালানোর ‘অনুমতি’ দিচ্ছে। ফলে সৃষ্ট যানজটে বাড়ছে নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে অপারগতা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনের সীমাবদ্ধতা এবং লোকবল সংকটের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

রাজধানীর পান্থপথ। নগরীর যে সড়কগুলো একসময় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ ছিল, এ সড়ক তার মধ্যে একটি। কিন্তু রিকশার দৌরাত্ম্য এ মোড়ের বিশৃঙ্খল চিত্র নিত্যদিনের। তবে শুধু পান্থপথ নয়, তিন চাকার এ বাহনের এমন ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য দেখা যায় শহরের সর্বত্র। কখনো উল্টোপথে, কখনো বড় বড় গাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে একধরনের একরোখা চলাচল নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে। তবে যান্ত্রিক রিকশার গতি পিলে চমকে দেবে যে কাউকেই।

একজন যাত্রী বলেন, তাড়াহুড়োর জন্যই এই রিকশা নেয়া। আরেকজন বলেন, আপনার জন্য যেটা উল্টো পথ আমার জন্য তা সোজা পথ। ইংরেজরা বাহনটির নামকরণ করেন ‘রিকশা’। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এই জনপদে প্রথম রিকশা ও সাইকেল নামে ত্রিচক্রযান ও দ্বিচক্রযান চালু হয়। সহজ ও সাশ্রয়ী বাহন হিসাবে জনপ্রিয়তাও অর্জন করে এই বাহন। কালের পরিক্রমায় সেই রিকশায় যখন ব্যাটারি যুক্ত হয়, তখন ইহা হইয়া ওঠে ভয়ঙ্কর।

মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রিকশা প্রয়োজনীয় যানবাহন হলেও রিকশা নগরবাসীর জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া রিকসার কারণে অনেক এলাকায় হাঁটা দূরত্বের স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে হাঁটিয়া স্কুলে যাইতে পারে না। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এই রিকশা যন্ত্রণার কারণ হইয়া উঠেছে। এসকল রিকশার ব্যাটারি চার্জের কারণে বিদ্যুতের অপব্যবহারও ঘটিছে ব্যাপক মাত্রায়। ২০১৬ সালে হাইকোর্ট এই রিকশা নিয়ে রুলও জারি করে। সরকারের তরফ থেকেও এই ব্যাপারে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তা সত্ত্বেও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ বিচরণ দেখা যায় বিশেষ করে ঢাকার আশপাশে। কঠোর হস্তে এর রাশ টেনে ধরা প্রয়োজন।

ড. মোয়াজ্জেম হোসাইন (সাবেক পরিচালক, দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বুয়েট) বলেন, যারা এগুলোর অনুমতি দিয়েছেন, তারাই এ ধরনের যান চলার জন্য দায়ী।

অযান্ত্রিক যান হওয়ায় এ বাহনের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ কিংবা নিবন্ধনের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। অপরদিকে সড়কে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। কিন্তু তারা বলছেন, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তারা নিরুপায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, শত শত রিকশা চলে এলে তা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যায়। তবে শিগগিরই রিকশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। রাজধানীতে ৮০ হাজার রিকশার নিবন্ধন থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রায় ১০ লাখ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকা,যানজট,দুর্ভোগ,রিকশা,রাজধানী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist