reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ জুলাই, ২০১৮

মানসিক স্বাস্থ্য অধিকার আইন-২০১৮ অনুমোদন মন্ত্রীসভায়

মানসিক রোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ ফৌজদারি অপরাধ

মানসিক রোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করা হবে। এ ধরনের অপরাধের বিচারে প্রতিটি জেলায় একটি করে মানসিক স্বাস্থ্য আদালত প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।

এমন বিধান রেখে মানসিক স্বাস্থ্য অধিকার আইন-২০১৮’র খসড়ায় চূড়ান্তর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে অপরাধের কাজে ব্যবহার করলে প্ররোচনাকারী পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পাশাপাশি সরকারি অনুমোদন ছাড়া মানসিক হাসপাতাল চালালে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

জানা গেছে, ১৯১২ সালে প্রণীত ‘দ্য লুন্সি অ্যাক্টকে হালনাগাদ করে নতুনভাবে মানসিক স্বাস্থ্য আইন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে ২৮টি ধারা রয়েছে। দেশের সব মানসিক হাসপাতাল চলবে প্রস্তাবিত আইনে।

এতে বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল খোলার লাইসেন্স দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে এসব হাসপাতাল তল্লাশি করার বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যে যে মানসিক হাসপাতালগুলো আছে সেগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। এই আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে।

কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি লাইসেন্সবিহীন মানসিক হাসপাতাল চালালে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

একই অপরাধ আবার করলে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

মানসিক রোগে আক্রান্ত নন, কোনো ব্যক্তিকে মানসিক রোগী বানিয়ে মিথ্যা সনদ দিলে চিকিৎসকের এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে মানসিক হাসপাতাল কিংবা সেবালয়ে আটক রাখলে অপরাধী এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মানসিক রোগীর সঙ্গে করা (অপরাধমূলক) আচরণ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অপরাধের বিচারে প্রতিটি জেলায় একটি করে মানসিক স্বাস্থ্য আদালত প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ কোনো ব্যক্তিকে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত করতে পারবে না।

অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বা সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে অবহেলা বা আদালতের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা তিন বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইনটি কার্যকর হলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের জন্য পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে একটি অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হবে। জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে, যার সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক।

মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার বিষয়ে কোনো অভিভাবক বা আত্মীয় সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিকারের জন্য এই কমিটির কাছে আবেদন করতে পারবে।

মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তি তার সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম হলে আদালত একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে অনূর্ধ্ব তিন বছর মেয়াদে ব্যবস্থাপক নিয়োগ করতে পারবে।

ব্যবস্থাপক দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব ও তালিকা আদালতে পেশ করবে।

আদালত নিযুক্ত ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে তার সম্পত্তি গ্রহণ, ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, অংশীদারি কারবার অবসান এবং এ সংক্রান্ত আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

ব্যবস্থাপক আদালতের অনুমতি ছাড়া মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক, হস্তান্তর, বিক্রয়, ভাড়া, উপহার, বিনিময় করতে বা পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে ওই সম্পত্তি লিজ দিতে পারবে না।

এছাড়া খসড়া আইনের ২১ ও ২২ ধারায় অভিভাবকহীন বা আত্মীয় পরিচয়হীন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৫ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানসিক রোগী ১৬ দশমিক ০১ ভাগ। ২০০৯ সালে সমীক্ষা অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে মানসিক রোগী ১৮ দশমিক ৪ ভাগ। আগের আইনটি শত বছরের পুরনো। তাই নতুন করে একটি যুগোপযোগী আইন করা হচ্ছে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানসিক,রোগী,খারাপ আচরণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist