নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকায় যাত্রীসেবার মান বাড়ছেই না
রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এখনো বন্ধ হয়নি, বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। একই কোম্পানির দুটি (লোকাল ও সিটিং) আলাদা রঙের বাস চালুর কথা থাকলেও তা মানছেন না পরিবহন মালিকরা। গতকাল সোমবার ঢাকার বিভিন্ন রুটে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাস বিভিন্ন কোম্পানির অধীনে চলাচল করলেও এর সবগুলোই ছিল সিটিং সার্ভিস। কোনো কোম্পানির আলাদা লোকাল সার্ভিসের বাস চোখে পড়েনি। আবার দাঁড়ানো যাত্রীও ছিল প্রতিটি সিটিং সার্ভিসে। দাঁড়ানো যাত্রী নিলেও ভাড়া আদায় হয়েছে সিটিং সার্ভিসেরই।
রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য বন্ধ করতে গত বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), পরিবহন মালিক সমিতি ও পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। সেসময় বাস মালিকরা প্রায় ৪০ শতাংশ বাস বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। এরপর পুনরায় সিটিং সার্ভিস চালু করতে বিআরটিএ, মালিক-শ্রমিক, নাগরিক প্রতিনিধি ও পুলিশের সমন্বয়ে আট সদস্যের কমিটি করা হয়।
সেই কমিটি বৈঠক করে কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে সিটিং সার্ভিস রাখার পক্ষে পরামর্শ দেয়। সেই শর্তের মধ্যে ছিল ঢাকায় চলাচলকারী সব পরিবহনকে কয়েকটি কোম্পানির অধীনে চলাচল করতে হবে। প্রতিটি কোম্পানির সিটিং সার্ভিস ও লোকাল পরিবহন থাকবে। এজন্য (লোকাল ও সিটিং) একই নামে দুটি ভিন্ন রঙের বাস চলবে। সিটিং সার্ভিসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। এটার স্টপেজ থাকবে সীমিত।
সুপ্রভাত স্পেশাল বাসের যাত্রী সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি সদরঘাট থেকে গাজীপুর যাব। আমার কাছ থেকে সিটিং ভাড়া (৫৫ টাকা) নিয়েছে। অথচ তারা লোকাল যাত্রী ওঠাচ্ছে একাধিক। প্রতিবাদ করলে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে।’ একই অবস্থা দেখা গেছে, আজমেরী গ্লোরী, বিহঙ্গ, মিরপুর ইউনাইটেড, তানজিল, ৩নং স্পেশাল, বন্ধু পরিবহন, রাইদা পরিবহনে। তবে এখনো সর্বনিম্ন ৫ টাকা ভাড়ার প্রচলন রয়েছে ৬নং, ৭নং ও ৮নং বাসগুলোতে।
সুপ্রভাত স্পেশাল পরিবহনের ড্রাইভার সোহাগ বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির সব বাস সিটিং সার্ভিস। লোকাল কোনো বাস নেই।’ সিটিং সার্ভিসে কেন দাঁড়ানো যাত্রী নেওয়া হচ্ছে—এ বিষয়ে সোহাগ বলেন, ‘আমরা না চাইলেও অনেক সময় যাত্রীরা উঠে পড়েন। তাছাড়া বড় বাসের মধ্যে অনেক জায়গা আছে এখানে কিছু লোক দাঁড়ালে তো কেউ অভিযোগ করেন না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতারণা দীর্ঘদিনের। এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। মালিকদের স্বার্থের দিকে সরকারের সমর্থন। সরকার কোনো দিনই নির্ধারিত ভাড়ার হার কার্যকর করতে পারেনি। তবে প্রতিটি বাস ২০ শতাংশ খালি সিট নিয়ে চলবে এভাবেই বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে আলাদা সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া আদায় অযৌক্তিক; যা পরিবহন ও মোটরযান আইনে নেই।
পিডিএসও/হেলাল