মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান

  ১০ জুন, ২০১৮

কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে

আজ রোববার, পবিত্র মাহে রমজানের ২৪তম দিন। আর নাজাতের সময়ের চতুর্থ দিন। রমজান মাস সহমর্মিতার মাস। সুতরাং এই মাসে নিজের অধীনস্ত ও কর্মচারীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো মোমিন বান্দার দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৭০২৮)।

রমজানে অফিসের কর্মচারী, অধীনস্ত গৃহকর্মীরাও রোজা রেখে থাকেন। তাই কর্মচারী ও গৃহকর্মীদের প্রতি অফিসের বস ও গৃহকর্তাদের কিছু দায়িত্ব চলে আসে। আর তা হচ্ছে তাদের কাজে সহযোগিতা করা। বরং তাদের কাজ কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যায়। যে কাজটা সে একা করবে তাতে নিজেও হাত লাগানো। না হলেও চলে এমন কাজের জন্য তাদের চাপ না দেওয়া। রোজার সময় তার নির্ধারিত দায়িত্ব থেকে কিছু কম সেবা গ্রহণ করেও তার অনুগ্রহ করা যেতে পারে।

এছাড়া অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজানে কর্মীদের পারিশ্রমিক কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া যায়। এটাও এক ধরনের সহানুভূতি। তবে এমন যেন না হয়, হাদিয়া কিংবা বোনাস দেওয়ার নাম করে আপনি এ কথা ভাববেন বোনাস তো দেবই, কিছু কাজ বেশি করালে ক্ষতি কী। তাহলে এটা আর রোজাদারের প্রতি আপনার সহমর্মিতা হলো না।

রোজাদারের প্রতি সম্মান ও রমজানে কর্মচারী এবং অধীনস্ত গৃহকর্মীদের প্রতি সদয় ও সদাচারের দাবি হলো, তার কাজ কমিয়ে দিয়ে পারিশ্রমিক বেশি দেওয়া। তাহলেই আপনি সুসংবাদের সৌভাগ্যবান অধিকারী হতে পারবেন। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীনস্থদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। (শুআবুল ঈমান, হাদিস নং-৩৩৩৬; সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস নং- ১৮৮৭)।

প্রতিষ্ঠানের রোজাদার কর্মচারীদের কাজের সময় বা ‘ওয়ার্ক টাইম’ কমিয়ে দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে। অন্য সময় একজন কর্মচারীর কাছ থেকে সাধারণত যেটুকু সময় কাজ নেওয়া হয়, রমজানে কিছুটা কমিয়ে তাদের ক্লান্তিবোধের প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদের কষ্ট লাঘব করা অবশ্যই অত্যন্ত সওয়াবের কাজ হবে। এটা এভাবেও হতে পারে, সময় কমিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করানোর ব্যবস্থা করা। এতে কর্মচারীদেরও একটু সহযোগিতা হবে আবার কর্মকর্তারও কাজের ঘাটতি হবে না।

কিন্তু কর্মচারীর জন্য রোজার কারণ দেখিয়ে কাজে অলসতা ও অবহেলা করা কোনোক্রমেই উচিত হবে না। আবার কাজের বাড়তি চাপের কারণে কর্মচারী যদি রোজা রাখা ছেড়ে দেয়, এটাও কর্তাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। তবে হ্যাঁ, কর্মচারী যদি কষ্ট করে নিজের দায়িত্ব আদায় করে তবে সে এর জন্য অধিক সওয়াবের অধিকারী হবেন।

রোজার দীর্ঘ উপবাসের কারণে শারীরিক অবসাদ, ক্লান্তিবোধ ও কিছুটা কষ্ট প্রায় সবারই হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে গভবর্তী নারী ও স্তন্যদানকারী জননীর কষ্ট একটু বেশি হয়। স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা যদি তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখেন তবে তাদের জন্য রোজা রাখা কিছুটা হলেও সহজ হয়ে ওঠবে। সাধারণ সময়েই গর্ভবতী মায়েদের অনিবার্য অনুষঙ্গ হলো, ক্লান্তিভাব ও দুর্বলতা অনুভব করা; সমান্য কিছু কাজকর্ম করেই ক্লান্ত হয়ে পড়া; আগে ভালো লাগত এমন খাবারও বিস্বাদ লাগা ইত্যাদি।

আর রোজার সময় তো এ অনুষঙ্গগুলো আরো বেড়ে যায়। একই অবস্থা হয় স্তন্যদানকারী জননীর ক্ষেত্রেও। শিশু দুধ পান করার কারণে তাদের শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে তাদের সহায়তা ও সহযোগিতা করা শুধু সওয়াবের বিষয়ই নয় বরং মানবতাও বটে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহানুভূতির এ মাসে নিজের অধীনস্ত ও কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কর্মচারী,সহানুভূতি,পবিত্র মাহে রমজান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist