নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩১ মে, ২০১৮

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে এবারের ঈদযাত্রা ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, দুর্যোগপূর্ণ বর্ষা মৌসুমে ও উত্তাল নৌপথে যাতায়াতের ঝুঁকি, রেলপথে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন, কোচ ও ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে শিডিউল বিপর্যয়ের শংকার মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। ঈদযাত্রার বহরে ৫ কোটি যাত্রীর ১৫ কোটি ট্রিপ সামাল দিতে সড়ক রেল ও নৌপথ প্রস্তুত নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতি ঈদে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই কারণে দূরপাল্লার বাস ঢাকা ছাড়তেই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। যাত্রাবাড়ীতে প্রবেশপথ কাঁচপুর মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা হলেও সুফল মেলেনি। দুপাশের দুই লেন চলে গেছে পার্কিংয়ে। আর দুই লেনে গাড়ি চলে উল্টো পথে। গাবতলী এলাকায় অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ করা হলেও তা আবার ফিরে এসেছে। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী তোলা হচ্ছে। রাজধানীজুড়ে যত্রতত্র যানজট। ঈদে যানজট আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) সাবেক পরিচালক সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত প্রমুখ।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দাবি করেন, ভাঙাচোরা সড়ক, দীর্ঘ যানজট, বাসের ট্রিপ সংখ্যা ঠিক রাখতে চালকের বেপরোয়া গতি, দুর্ঘটনা—এসব কারণে প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্ভোগের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হবে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের। এই ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ এবং দেশব্যাপী এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরো প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ যাত্রী। এই বিশাল যাত্রীর চাপ সামাল দেওয়ার মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা অথবা রাস্তা আমাদের নেই।

তিনি দাবি করেন, নির্মাণে সঠিক মাত্রায় উপকরণ ব্যবহার না করা, সময়মতো সংস্কার না করা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশের ৪০ শতাংশ সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা।

তিনি বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রী পরিবহনে সড়ক পথে ৪৪ হাজার ৩৭৪টি বাস, ২৭ হাজার ৯৬২টি মিনিবাস, ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬০টি প্রাইভেট কার, ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯১টি সিএনজি অটোরিকশা ৯৮ হাজার ১৭৫টি মাইক্রোবাস, ২১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৯টি মোটরসাইকেল, ৫৪ হাজার ৪৩৭টি জিপ, ১৭ হাজার ৫১৬টি হিউম্যান হলার, ২০ হাজার ৪২২টি অটো টেম্পো, ৭৩ লাখ প্যাডেলচালিত রিকশা ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। নৌপথে ৪ হাজার ২২১টি ছোট-বড় লঞ্চ ৪২৮টি ট্রলার ৮২ হাজার নৌকা, এক হাজার ২০০ স্পিডবোড। রেলপথে পূর্বাঞ্চলে ৪৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ৭ জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন ৭৩টি লোকাল ও কমিউনিটার ট্রেন আমাদের যাতায়াতের বহরে রয়েছে। যা স্বাভাবিক সময়ের প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ কম। এই সংকটের মধ্য দিয়ে এই বিশাল যাতায়াত বহর সামাল দিতে বাড়তি যা, যোগান দেওয়া হয় তা হলো সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড় ঝক্কড় বাস-মিনিবাস মেরামত করে বহরে সংযুক্ত করা, সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাস দূরপাল্লার বহরে সংযুক্ত করা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক পিকআপে যাত্রী বহন করা। তবে রেলপথে মেয়াদোত্তীর্ণ বগি মেরামত করে বহরে যুক্ত করার পাশাপাশি বেশ কয়েক জোড়া ট্রেন বাড়তি সার্ভিস হিসেবে যুক্ত করা হয়। নৌপথে গত কয়েক বছরে বেশ কটি নতুন যাত্রীবাহী লঞ্চ বহরে যুক্ত হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য বলে প্রতিবেদনে দাবি করে সংগঠনটি।

সংগঠনের পর্যবেক্ষণ মতে, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় প্রায়শ যানজট হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে প্রায় সারা বছরই দুর্ভোগ থাকে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে তা অসহনীয় মাত্রায় রূপ নেয়। এই ঈদেও এ ঘাট দিয়ে চলাচলকারীরা যাত্রী সাধারণ দুর্ভোগে পড়বে। বাড়তি মানুষের চাপের কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ প্রতি ঈদে দুর্ভোগ লাঘবে নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসে না। এবারও নৌপরিবহনমন্ত্রী সরেজমিন ঘাট পরিদর্শন করে ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তবে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ফোরলেন মহাসড়কের দুই কিলোমিটার খানাখন্দ সংস্কার, দৌলতদিয়ার চারটি ফেরিঘাট সর্বক্ষণ সচল রাখা ও ঘাটের সংখ্যা আরো বাড়ানো এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অন্তত ২০-২২টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা করা জরুরি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদযাত্রা,ভোগান্তি,যানজট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist