মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান
রোজার মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরি
আজ শনিবার মাহে রমজান ও রহমতের দশকের নবম দিন। রমজান মাস সিয়াম-সাধনা ও তাকওয়া অর্জন এবং রহমত ও বরকতের মাস। জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ মাসটি বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন। তাই বিশেষভাবে এ মাসের পবিত্রতা, মর্যাদা রক্ষার্থে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকা চাই। এ মাসের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রথম করণীয়, আল্লাহ তায়ালা এ মাসে ইবাদতের যে বিধান দিয়েছেন এবং রাসুল (সা.) আমাদের জন্য যে ইবাদত সুন্নাহ করেছেন, অর্থাৎ রোজা রাখা ও তারাবির নামাজ, তা যথাযথভাবে আদায়ে সচেষ্ট হওয়া। শরিয়তসম্মত অজুহাত ছাড়া তার ব্যাপারে অবহেলা না করা।
শরিয়তসম্মত ওজরবশত পানাহার করতে হলে প্রকাশ্যে না করা। চিন্তা করার বিষয় এই যে, অনেক ক্ষেত্রে শরিয়তে ‘তাশাব্বুহ বিস সা-ইমিন’ (রোজাদারদের সাদৃশ্য গ্রহণ)-এর বিধান এসেছে। এ বিধানের তাৎপর্যই হলো, রমজানের মর্যাদা রক্ষা করা। যেমন মুসাফিরের জন্য রোজা না-রাখার অবকাশ থাকলেও কোনো মুসাফির যদি দিনের বেলা মুকিম হয়ে যায়, তাহলে তার কর্তব্য, অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা। এতে কি রোজা হবে? রোজা হবে না, কিন্তু রোজার মর্যাদা রক্ষা হবে।
জবানের হেফাজত। অর্থাৎ রাগ, মিথ্যা, গিবত-পরনিন্দা, অশ্লীল ও অহেতুক কথাবার্তা ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকা। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যাচারিতা ও মন্দ কাজ করা পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার পরিত্যাগের কোনোই গুরুত্ব আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহ তায়ালা তার পানাহার ত্যাগ করার কোনোই পরোয়া করেন না। এতে প্রতীয়মান হয়, রোজা অবস্থায় মারধর-ঝগড়াঝাটি তো দূরের কথা, শোরগোল করাও রোজার মর্যাদা পরিপন্থী।
কানকে সর্বপ্রকার গোনাহের কাজ থেকে হেফাজত করা। যেমন গানবাদ্য, গিবত, পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা শোনা থেকে দূরে থাকা।
সাহরি ও ইফতারে হারাম আহার পরিহার করা। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রেখে হারাম মাল দ্বারা ইফতার করল, সে যেন একটি অট্টালিকা নির্মাণ করল এবং একটি শহর ধূলিস্যাৎ করে দিল।
এরকম আরো অনেক বিষয় আছে। সর্বশেষ যে বিষয়টি বলে এ লেখা শেষ করছি তা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে এ মাসকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টের মাসে পরিণত না করা হয়। অন্তত মুসলিম ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতাদের তো কিছুটা ‘ত্যাগ’ স্বীকার করে হলেও এদিকে নজর দেওয়া অতি জরুরি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রমজানের পবিত্রতা ও তার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে রমজানের যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
"