গাজী শাহনেওয়াজ
ইসিতে আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
সিটি নির্বাচনের প্রচারে এমপিরা কি অংশ নিতে পারবেন?
স্থানীয় সরকারের সিটি নির্বাচনী প্রচারে এমপিদের অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ প্রস্তাবের ওপর মতামত দেবেন নির্বাচন কমিশনাররা। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি নির্বাচনে এমপিরা প্রচারণায় নামতে পারবেন কী, পারবেন না—এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে, এমপিদের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেওয়া নিয়ে এর আগের বৈঠকগুলোয় পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আসে। তবে আজকের বৈঠকের আগে নির্বাচন কমিশনারা এ ইস্যুতে মন্তব্য করতে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। আগাম মন্তব্য করে নিজেদের বিতর্কের মধ্যে না ফেলতে এ কৌশল নিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের দাবি ছিল সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার। দলটির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমপিরা প্রচারণায় যেতে পারবেন—এ ধরনের বিধান বহাল রেখে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে এ বিষয়টি আলোচনার জন্য এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে।
কমিশনাররা একমত হলে আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কিংবা পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের মাঠে অংশ নিতে পারবেন এমপিরা।
সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ রেখে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে—এ বিষয়ে আপনার মতামত কী জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। কারণ হিসেবে এই কমিশনার বলেন, ‘আমি এখন বলছি, এমপিদের প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় বসলে আমারই আবার মনে হতে পারে এমপিদের প্রচারে নামার সুযোগ দেওয়া সঠিক হবে না।’ তাই কমিশন সভা পর্যন্ত আপনারা অপেক্ষা করুন; কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে পারবেন, যোগ করে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
আর কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আমি তো সুশীল সমাজের প্রতিনিধি না যে, এ বিষয়ে মতামত দেব। কারণ কমিশনার হিসেবে আলাদা মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। আগামীকাল (আজ) কমিশন সভা হবে, এর পরই সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।’
আগের মিটিংয়ে দ্বিমত পোষণ করা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি তো এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না। কারণ এটা আইনি বিষয়। এর আগে আচরণবিধি সংশোধন করে এমপিদের প্রচারণায় সুযোগ দেওয়া দিয়ে শক্ত বক্তব্য রেখেছিলেন এই নির্বাচন কমিশনার।’ কমিশন সভায় অন্য কমিশনারদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষ স্বাধীনতা চায়। আর আমরা পরাধীনতা চাইছি।’ তিনি আরো বলেছিলেন, এ পর্যায়ে বিধিমালা সংশোধন করা হলে কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে কথা উঠবে। এমনকি কমিশনের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত কেউ কেউ বলেন, এ বিধিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্যটি সেদিন নিশ্চিত করেছিল।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে বৈঠকে বসেছিল কমিশন। কিন্তু নানামুখী মতামতের কারণে সে দিনকার বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। পুনর্নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটির নির্বাচন। আজ কমিশন সভায় এমপিদের প্রচারণায় অংশ নেওয়া না নেওয়া-সংক্রান্ত ইস্যুটির ইতিবাচক ফল এলে আসন্ন ওই সিটি নির্বাচনের মাঠে দেখা যাবে এমপিদের; প্রচারণায় ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। পাশাপাশি আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ে যেতে পারে, যা সামলে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ করা নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করে। ওই বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে আচরণবিধি সংশোধনের দাবি জানান।
পিডিএসও/হেলাল