মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান
জীবনের পাপ-তাপ ধুয়ে-মুছে সাফ করার মোক্ষম সময়
আজ বৃহস্পতিবার। পবিত্র মাহে রমজান ও রহমতের দশকের সপ্তম দিন। রমজান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার বান্দার প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামত। কারণ বান্দার গোনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার প্রধান সময় হলো মাহে রমজান। এ মাস ক্ষমা ও মুক্তির মাস। বিগত জীবনের পাপ-তাপ ধুয়ে-মুছে সাফ করার মোক্ষম সময় হলো রমজান মাস। যার সুসংবাদ স্বয়ং রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে ঘোষণা করেছেন, ‘রমজান মাসের প্রথম দশক হলো রহমত; দ্বিতীয় দশক হলো মাগফিরাত; আর শেষ দশক হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির’ (সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস নং-১৮৮৭; শুআবুল ইমান লিলবাইহাকি, হাদিস নং-৩৩৩৬)। অন্য হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-১৯০১; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১৮১৭)।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে বলা যায়, শুধুমাত্র পানাহার ও স্ত্রীসহবাস থেকে বিরত থাকলেই রোজার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। বরং রোজা রাখতে হবে ইমানের সঙ্গে, সাওয়াবের আশায় ও খোদাভীতি অর্জনের লক্ষ্যে। সুতরাং যদি এর ব্যতিক্রম হয়, যদি শুধু লোক দেখানোর জন্য হয়, যদি এই উদ্দেশ্যে রোজা রাখা হয় যে, আমি যদি রোজা না রাখি মানুষ কী বলবে! অর্থাৎ যদি শুধু সামাজিক রীতি হিসেবে হয় এবং যদি ইমানের সঙ্গে না হয়, সওয়াবের আশায় না হয় ও তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে না হয়; তাহলে এই রোজা শুধুমাত্র উপোস থাকা ছাড়া অন্য কোনো কাজে আসবে না। আর তাকওয়া অর্জনের জন্য আমলের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা শর্ত তো আছে। আর তা হচ্ছেÑ গুনাহ বর্জন। গুনাহ বর্জন করা ছাড়া তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জন করা অসম্ভব!
তাই এ মাসেই আমাদের সব ধরনের গুনাহের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। গুনাহ বর্জনের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলতে হবে আমাদের অন্তরাত্মাকে। যেভাবে গুনাহ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, সেভাবে গুনাহ না করাটাকে অভ্যাসে পরিণত করে তুলতে হবে। আর ‘আমি রোজাদার’Ñ এ কথা চিন্তা করে এ মাসেই সেটা সহজে করা সম্ভব। একদম সহজে! অনেকেই বেশির ভাগ সময় গুনাহ করেন কোনো কারণ ছাড়াই। শুধু অভ্যাসের কারণে। আর অভ্যস্ততার কারণে সবচেয়ে বেশি যে গুনাহগুলো করতে দেখা যায় তা হলো জবানের গোনাহ। মিথ্যা, গিবত, কটূবাক্য ইত্যাদির মাধ্যমে।
১. মিথ্যা : মিথ্যা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সারা দিন রোজা রেখে মিথ্যাচারিতা ও মন্দকাজ করা ত্যাগ করেনি তার পানাহার পরিত্যাগের কোনোই গুরুত্ব আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহ তায়ালা তার পানাহার ত্যাগ করার কোনোই পরোয়া করেন না’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-১৮০৪)। আর আল্লাহ নিজে বলেছেন, ‘মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-৬১)।
২. মন্দ বা কটূবাক্য বলা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন কোনো অশ্লীল বা মন্দ কথা না বলে। যদি কেউ তাকে গালিগালাজ করে কিংবা মারধর করে তবে সে যেন (তদ্রƒপ আচরণ বা গালির প্রতি উত্তরে গালি না দিয়ে) শুধু এতটুকু জানিয়ে দেয় যে, আমি রোজাদার’ (আবু দাউদ, হাদিস নং-২৩৬৫)।
৩. গিবত : পরনিন্দা করা মানে রোজা রেখে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। কল্পনা করে দেখুন! কত নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য একটা কাজ! আল্লাহ মাফ করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো গিবত না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো’ (সুরা হুজরাত, আয়াত- ১২)। আর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গিবত ব্যভিচার থেকেও নিকৃষ্টতর (শুআবুল ইমান লিলবাইহাকি, হাদিস নং-৬৩১৬)। কতটা খারাপ কাজ চিন্তা করুন, নিকৃষ্ট কাজের চেয়েও নিকৃষ্ট!
৩. রাগ ক্ষোভ : এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের বিনিময়ে রয়েছে জান্নাত! অথচ কেন জানি রমজান মাসেই মানুষকে রাগতে দেখা যায় বেশি। ক্ষুধার কারণে বলে হয়তো! কিন্তু এটা কি সংযম হলো? রাগ-ক্ষোভ যতটা না সম্পর্ক নষ্ট করে তার চেয়ে নিজের অন্তরকেই আহত করে বেশি! রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা রাগান্বিত হয়ো না (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-৫৭৬৫)’। তিনি বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে ঘৃণা করো না, তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৭১৭)। এ রকম যত অন্তরের ব্যাধি আছে সব ছাড়তে হবে এ মাসেই।
লেখক : শিক্ষক, ইদারতুল কোরআন, ঢাকা।
ই-মেইল: সসল.শযধহ০১৮২৪@মসধরষ.পড়স
"