মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান

  ২২ মে, ২০১৮

রোজা পালনে সাহরির গুরুত্ব ও ফজিলত

আজ মঙ্গলবার পবিত্র মাহে রমজান এবং রহমতের দশকের পঞ্চম দিন। রমজানের রোজা পালনে সাহ্রি খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। সময়মতো সাহ্রি খাওয়ার মধ্যে অশেষ সওয়াব, বরকত ও কল্যাণ নিহিত। সাহ্রির এ বিধানটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বড় নিয়ামত। কেননা সাহ্রি খেলে সারা দিন না খেয়ে থাকার এক সঞ্জীবনী শক্তি অর্জিত হয়। সাহ্রি খেলে শরীর ও মন থাকে সবল। পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদত করা যায়।

রাসূল (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা সাহ্রি খাওয়ার মাধ্যমে দিনে রোজা রাখার শক্তি অর্জন করো আর দিনে হালকা ঘুমের মাধ্যমে রাত জেগে ইবাদত করার শক্তি অর্জন করো।’ (সুনানে ইবনে মাজা, হদিস নং ১৬৯৩)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা সাহ্রি খাও, কেননা এতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং ১৮২৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬০৩)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরাম বলেন, দুনিয়াবি বরকত হলো এই, সারা দিন রোজা রাখার শারীরিক শক্তি অর্জিত হয়, আর পরকালীন বরকত হলো, অশেষ সওয়াব ও পুণ্য হাসিল হয়।

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাদের ও ইহুদি-নাসারাদের রোজার পার্থক্য হলো সাহ্রি খাওয়া।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬০৪)। সাহ্রির গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহ্রি খাও।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৩৪৭৬)। সাহ্রি খাওয়ার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘সাহ্রি হলো বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহ্রি খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহ্রি খেয়ে নাও। কেননা সাহ্রির খাবার গ্রহণকারীর ওপর আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর ফেরেশতারা রহমত বর্ষণ করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১১১০১)।

সাহ্রি শব্দটি আরবি ‘সাহর’ বা ‘সুহুর’ শব্দ থেকে নির্গত। যার আভিধানিক অর্থ রাতের শেষ ভাগ। আর শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা পালনের উদ্দেশ্যে মোমিন বান্দা শেষ রাতে সুবহে সাদিকের আগে যে পানাহার করে থাকে তাকে সাহ্রি বলা হয়। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সাহ্রি খাওয়া সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজার উদ্দেশ্যে সাহ্রি খেয়েছেন এবং তার উম্মতকেও তা খেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহ্রি খাওয়ার কোনো বিধান ছিল না। তখন নিয়ম ছিল কোনো মুসলমান এশার নামাজ পড়ে কিছু খেয়ে বা না খেয়ে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়লেই রোজা শুরু হয়ে যেত। শেষ রাতে জাগ্রত হলেও আর খাওয়া-দাওয়া বা স্ত্রী সহবাসের কোনো সুযোগ ছিল না। ওমর (রা.) একবার এশার পর তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হলেন। অন্যদিকে আরেক সাহাবি সারমা ইবনে কায়েস গানাবী (রা.) মাগরিবের পর পর কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, রাসুল (সা.) এশার নামাজ আদায় করে ফেললেন কিন্তু তখনো তার ঘুম ভাঙল না। পরবর্তীতে জেগে খাওয়া-দাওয়া করলেন। ভোরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে সমাধান জানতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাজিল করলেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো ফজরের কালো রেখা থেকে সাদা রেখা স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭; তাফসিরে ইবনে কাসির- ১/৫১১)। তখন থেকে মুসলমানরা শেষ রাতে জেগে ওঠে সাহ্রি খেতেন।

সাহ্রির একবারে শেষ সময়ে সাহ্রি খাওয়া সুন্নাত। রাসুল (সা.) নিজে বিলম্বে সাহ্রি খেতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যত দিন এ উম্মত বিলম্বে সাহ্রি খাবে আর দ্রুত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২১৫৪৬)।

সাহ্রিতে পেটভরে খাওয়া জরুরি নয়; বরং দুয়েকটি খেজুর, পানি দিয়েও সাহ্রি খাওয়া যেতে পারে। হদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মোমিনের জন্য খেজুর কতই না উত্তম সাহ্রি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৩৪৭)। অর্থাৎ সাহ্রিতে খুব ভালো মতো না খেলে তা হবে না, এমনটা মনে করা যাবে না। আবার মনে রাখতে হবে সাহ্রি খাওয়া সুন্নাত কিন্তু রোজা রাখা ফরজ। সুতরাং যদি কেউ সময়মতো জাগতে না পারেন এমনকি ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে সাহ্রি খেতে না পারার অজুহাতে রোজা ছেড়ে দেয়াও যাবে না। সুন্নতের কারণে ফরজ ত্যাগ করা সমীচীন নয়।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। অনেকে সাহ্রিকে সেহরি বলে থাকেন যা অনুচিত। কেননা, আরবিতে জবর, জের বা পেশের কারণে অর্থের পরিবর্তন হয়ে যায়। সাহ্রি (যা আরবিতে সিন অক্ষরে জবর দিয়ে উচ্চারণ করতে হয়) অর্থ শেষ রাতের খাবার। আর সেহরি (যা আরবিতে সিন অক্ষরে জের দিয়ে পড়া হয়) অর্থ হলো জাদু, তন্ত্র মন্ত্র পাঠ ইত্যাদি। আল্লাহ পাক আমাদের সঠিক সময়ে সাহ্রি খেয়ে বরকত হাসিল করার ও রমজানের সব আমল করার এবং এগুলো থেকে কল্যাণ ও বরকত অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোজা পালন,সাহ্রির গুরুত্ব,ফজিলত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist