মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান

  ২১ মে, ২০১৮

রমজান মাসের তারাবির নামাজ ও এর ফজিলত

পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের আজ চতুর্থ দিন। মাহে রমজানের আমলগুলোর মধ্যে তারাবির নামাজ একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল। গোটা মুসলিম জাহানে তারাবির নামাজ অত্যন্ত আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আদায় হয়ে থাকে। তারাবি অতি বরকতময় সুন্নত নামাজ। তারাবি নামাজ পড়ার দ্বারা রমজান ও কোরআনের হক আদায় হয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বিশেষ রহমত ও মাগফিরাত, সর্বোপরি আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্য উচিত একনিষ্ঠতার সঙ্গে এই ইবাদতে মশগুল থাকা। রমজানের দিনে রোজা রাখাকে ফরজ আর রাতের বেলা তারাবি নামাজকে করা হয়েছে সুন্নত। রাসুল (সা.) তারাবির ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রাতে কিয়াম করবে (তারাবি পড়বে) তার অতীতের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-১৯০৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৫)।

তারাবির গুরুত্ব এ থেকেও বোঝা যায় যে, সুন্নত ও নফল নামাজ সাধারণত জামাতে আদায় করা নিষেধ, অথচ তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার বিধান এসেছে। তবে রাসুল (সা.) নিজে নিয়মতান্ত্রিকভাবে জামাতের ব্যবস্থা করেননি, উম্মতের ওপর তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। এ থেকে বোঝা যায়, তারাবির মর্যাদা সাধারণ নফল নামাজ থেকে অনেক বেশি।

তারাবি আরবি শব্দ, যা তারবিহাতুন শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হলো, আরাম, প্রশান্তি অর্জন ও বিরতি দেওয়া। রমজান মাসে এশার নামাজের পর বিতর নামাজের আগে অতিরিক্ত যে সুন্নত নামাজ আদায় করা হয় তাকে তারাবির নামাজ বলে। এই নামাজের নিয়ম হলো, প্রতি দুই রাকাতের পর সালাম ফেরানো। এভাবে মোট ১০ সালামে ২০ রাকাত আদায় করা।

তারাবির নামাজের বিধান

রমজান মাসে এশার নামাজের পর তারাবি নামাজ আদায় করা নারী-পুরুষ সবার জন্যই সুন্নতে মোয়াক্কাদা। তবে পুরুষরা মসজিদে জামাতের সঙ্গে আর মহিলারা ঘরে এই নামাজ আদায় করবে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে মাত্র তিন দিন জামাতের সঙ্গে তারাবি আদায় করার পর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জামাতের সঙ্গে তারাবি পড়া ছেড়ে দিলেন। অতঃপর রাসুল (সা.) বাকি জীবনে, আবুবকর (রা.) এর খিলাফতকালে এবং ওমর (রা.) এর খিলাফতের প্রথমদিকে এই অবস্থাই বিদ্যমান ছিল। (সহিহ বোখারি ১/২৬৯, সহিহ মুসলিম ১/২৫৯)।

আরেকটি বিষয় হলো, জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করা। এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নতে কেফায়া। কোনো মহল্লায় যদি কেউ-ই জামাতের সঙ্গে না পড়ে, তাহলে সবাই গোনাহগার হবে। আর যদি কিছু লোক মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করে আর কেউ কেউ ঘরে একা একা আদায় কওে, তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে এ কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, যারা একা একা পড়ল তারা জামাতে পড়ার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হলো (কামুসুল ফিকহ- ২/৪৫০)।

আর পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজে একবার কোরআন শরিফ খতম করা সুন্নত (রাদ্দুল মুহতার- ২/৪৯৭)। তবে অবশ্যই তারাবিতে কোরআনুল কারিম ধীরে ধীরে পড়তে হবে, আমাদের দেশে হাফেজ সাহেবরা যেভাবে ফোরজি স্পিডে অর্থাৎ দ্রুত গতিতে পড়েন, এটা অবশ্যই ত্যাগ করা উচিত। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তোমরা কোরআনকে তারতিলের সঙ্গে ধীরে ধীরে সহিহ-শুদ্ধভাবে পড় (সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত-৪)। আল্লাহ তা’আলা আমাদের রমজানের হক আদায় করার, প্রতিদিন সুন্দরভাবে গুরুত্বসহ জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজসহ সব ইবাদত-বন্দেগি সঠিকভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফজিলত,তারাবির নামাজ,রমজান মাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist