মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান

  ২০ মে, ২০১৮

মাহে রমজানের শ্রেষ্ঠ উপহার মহাগ্রন্থ আল কোরআন

আজ রোববার পবিত্র মাহে রমজান ও রহমতের দশকের তৃতীয় দিন। আর মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দেওয়ার জন্যই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআন। এ উপহারটি হচ্ছে পরশ পাথর। এর কারণেই আল্লাহ রমজান মাসের মর্যাদা দান করেছেন। যে রাতে এই কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, সেই রাতটিও হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যেই ব্যক্তির ওপর এই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫) বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে মানুষের পথের দিশারি, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী আল কোরআন। অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস প্রত্যক্ষ করবে তারা এতে সিয়াম পালন করবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)। এমনিভাবে সুরা কদরের প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন, আমি কোরআনকে অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে।

রোজা পালনের এই বিধান নাজিল হওয়ার প্রায় ১৪ বছর আগে ৬১০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ রমজান রাতে মক্কা মোকাররমার কাবা শরিফ থেকে তিন মাইল উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত গারে হেরায় অবস্থানরত প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোরআন নাজিলের সূচনা হয়। সর্বপ্রথম যে পাঁচখানা আয়াতে কারিমা নাজিল হয়, তাতে রয়েছে পাঠ করার তাকিদ, সৃষ্টি জগতে স্রষ্টার পরিচয়, মানব সৃষ্টি, লেখাপড়া, বিদ্যা অর্জন প্রভৃতি বিষয়। কোরআন মাজিদে রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়। ড. মরিস বুকাইলি তার রচিত বাইবেল কোরআন অ্যান্ড সায়েন্স গ্রন্থে লিখেছেন, কোরআনের আয়াতগুলোয় স্ববিরোধিতা নেই, কোনোরূপ বৈপরীত্যও নেই। বাইবেলের বাণীগুলোয় মানুষের হস্তক্ষেপের অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে, কিন্তু কোরআন তা থেকে একেবারে মুক্ত। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কোরআন সর্বতোভাবে নির্ভুল এবং এক অনন্য কিতাব। এ কথাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোরআনুল কারিমের সুরা বাকারার ২ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলেন, ‘এ সেই কিতাব, যাতে কোনোরূপ সন্দেহ নেই।’

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি খ- খ-ভাবে, যাতে আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা নাজিল করেছি পর্যায়ক্রমে। (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১০৬)।

কোরআনের পরিচয় : কোরআন শব্দটি দুটি শব্দ কারনুন ও কারউন থেকে এসেছে। কারনুন অর্থ মিলানো। আর কারউন অর্থ পঠিত কিতাব। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কোরআন মাজিদ সব কিতাবের মধ্যে সর্বাধিক পঠিত কিতাব। তাছাড়া এর মধ্যে সূরা, আয়াত এবং অক্ষরগুলো মিলানো হয়েছে। পরিভাষায়, কোরআন আল্লাহর নাজিলকৃত ওই কিতাবকে বলা হয়, যা তিনি তার শেষ নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরে দীর্ঘ ২৩ বছরব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রয়োজন মোতাবেক অল্প অল্প করে অবতীর্ণ করেছিলেন। ভাষা এবং ভাব উভয় দিক থেকেই কোরআন আল্লাহর কিতাব। অর্থাৎ কোরআনের ভাব (অর্থ) যেমন আল্লাহর তরফ থেকে আগত তেমনি তার ভাষাও।

কোরআন তিলাওয়াতের ফজিলত : মাহে রমজানের আমলগুলোর অন্যতম একটি আমল হলো, কোরআন তিলাওয়াত। ‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেওয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে, এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০)।

উম্মুল মোমেনিন আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু আনহার সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল কোরআনে দক্ষ ও জ্ঞানী ব্যক্তি সম্মানিত পুণ্যবান ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবে। যে ব্যক্তি কোরআন আটকে আটকে তেলাওয়াত করে এবং তা তার জন্য কষ্টকর হয়, তার জন্য দুটি প্রতিদান রয়েছে। প্রথমটি, তেলাওয়াতের প্রতিদান, দ্বিতীয়টি কষ্টের প্রতিদান।’ (সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফ)। আবু মুসা আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মোমিন কোরআন তেলাওয়াত করেন, তার দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মতো, যা সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। আর যে মোমিন তেলাওয়াত করেন না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের মতো যার ঘ্রাণ নেই, কিন্তু মিষ্টি।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ)।

বিদায় হজের ভাষণে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাহ, তোমরা যদি তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর, তাহলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না।’ (সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম শরিফ)।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আল কোরআন,মহাগ্রন্থ,শ্রেষ্ঠ উপহার,মাহে রমজান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist