নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ মে, ২০১৮

পদ্মা সেতুর সামনে চ্যালেঞ্জ বর্ষার স্রোত

নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়

চলতি মাসেই বসছে পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান। আগের তিনটির সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে নতুন স্প্যানটি বসাতে নদীর জাজিরা প্রান্তে প্রস্তুত ৪১ নম্বর পিয়ার। মাওয়ার ইয়ার্ডে রং করা শেষে দু-এক দিনের মধ্যে স্প্যানটি নিয়ে যাওয়া হবে নির্ধারিত পিয়ারের কাছে।

তবে, আগামী মাস থেকে নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় কাজের গতি কমে আসার শঙ্কা প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের। এদিকে এডিপির বই ঘেঁটে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরে ৪৪৬টি প্রকল্প শেষ করার জন্য ঠিক করা হয়েছে। সেই তালিকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি নেই। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

নদীতে দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর তিনটি স্প্যান। নানা জটিলতা আর শঙ্কার মুখে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতিতে আশা জাগানো এ স্প্যানগুলোর সঙ্গে মিশে আছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নও। গত বৃহস্পতিবার পাস হওয়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে পদ্মা সেতুর জন্য মাত্র ৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বছর প্রকল্পটি শেষ করতে হলে বরাদ্দ দরকার ১৩ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। শুধু পদ্মা সেতু নয়, পুরো সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ আছে ৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা।

গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৫৩ শতাংশ খরচ হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচার বা স্প্যান বসানো শুরু হয়েছে মাত্র। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

পাস হওয়া এডিপি সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কোনো প্রকল্পে কাজ হয়ে গেলেও আমরা ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করি না। পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত টাকা খরচ হয়ে গেলেও বাড়তি বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ আছে।’ নির্ধারিত সময়ে পদ্মা শেষ হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু বলেন, এডিপির বইয়ে যেভাবে বলা আছে, সেভাবে শেষ হবে। নতুন এডিপি বই অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হবে।

আনুষ্ঠানিক কাজ শুরুর প্রায় তিন বছর পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যানটি। এরপর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসাতে প্রায় চার মাস সময় লাগলেও তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়েছিল তার দেড় মাসের মাথায়। চতুর্থ স্প্যানটি ইয়ার্ডে রং করা শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। এখন অপেক্ষা এটি জাজিরা প্রান্তে নিয়ে নির্ধারিত পিয়ারের ওপর বসানোর। এ স্প্যানটি বসানোর পর পঞ্চম স্প্যানটি জোড়া দেওয়া গেলেই প্রথমবারের মতো জাজিরা পারের সঙ্গে সংযুক্ত হবে পদ্মা সেতু। তাই আশাবাদী পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সমস্যা আসছে, জটিলতা আসছে। এগুলো মোকাবিলা করেই তো কাজ করতে হবে। আমরা অবশ্যই আশাবাদী। কোনো আইটেম হয়তো একটু পরে করেছি, কোনোটা আগে করেছি। এটা প্রতিনিয়তই হচ্ছে। এখন আমাদের প্রতিদিনের উন্নতি আশা করছি ভালো হবে। তবে নদীতে বাড়ছে স্রোত। ক্ষণে ক্ষণে ঝড়ের পূর্বাভাসও রয়েছে। তাই কাজ করতে হচ্ছে নদীর স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

পদ্মা সেতুর পরামর্শক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, মাওয়ার দিকে যে মূল চ্যানেল সেটাতে বর্ষার সময় কাজ করা সম্ভব না। প্রত্যেকটা খুঁটির নিচের মাটি এখন পরীক্ষা করে কোনটা আগে করা হবে বা কোনটা পরে করা হবে এটা ঠিক করা হচ্ছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ৮৭ ভাগ কাজ হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৬০ ভাগ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা কঠিন হবে বলে কয়েক দিনের মধ্যেই মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন লক্ষ্য ঠিক করার কথা রয়েছে। দু-একটি করে হাতের আঙুলে গুনে তিনটি স্প্যান অর্থাৎ অর্ধকিলোমিটারের সেতু এখন প্রায় দৃশ্যমান। এর সঙ্গে জোড়া দিয়ে ৪০ এবং ৪১ নম্বর পিয়ারের মধ্যে চতুর্থ স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়া সম্ভব হলে তা কেবল প্রকৌশলীদের আত্মবিশ্বাসই বাড়িয়ে তুলবে না, একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর স্বপ্নের ভিতকে করবে আরো বেশি শক্তিশালী।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পদ্মা সেতু,পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান,পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ,বর্ষা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist