কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চায় নিহত রাজীবের পরিবার
রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের ২ বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর ঘটনায় রাজীবের মৃত্যুতে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছে তার পরিবার। তারা বলছেন, রাজীবের অবর্তমানে তার এতিম ২ ছোট ভাইয়ের জন্য ওই অর্থ দরকার। রাজীব আহত হওয়ার পরদিন গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট এক আদেশে তার চিকিৎসা ব্যয় ২ বাসের মালিককে বহনের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে রাজীবকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেওয়া হয়।
রাজীবের কাকা পুলিশ পরিদর্শক আল আমিন বলেন, হাইকোর্ট এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে একটি রুল দিয়েছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সরকার সেই ব্যবস্থা করে দিক। এছাড়া রাজীবের মৃত্যুর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে তার মামা জাহিদুল বলেন, বিআরটিসি থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে, স্বজন পরিবহন থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। এরপর একটিবারও তাদের কেউ খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি।
অন্যদিকে শৈশবে মা-বাবা হারা রাজীব হোসেনের সব স্বপ্ন আর সব লড়াই শেষ হয়ে গেছে দুর্ঘটনায়; তার ছোট ২ ভাইয়ের সামনে এখন অনিশ্চয়তার সীমা নেই। চোখে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে রাজীবের ছোট ভাই মেহেদী বলল, ভাইয়া নেই, আমাদের তো আর চলার গতিও নেই। আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে মেহেদী যখন কথা বলছিল, ছোট ভাই আবদুল্লাহও ছিল তার পাশে। তারা দুজন যাত্রাবাড়ীর তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সপ্তম আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
প্রসঙ্গত চলতি মাসের শুরুর দিকে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে ২ বাসের চাপায় যেভাবে কলেজছাত্র রাজীবের হাত কাটা পড়েছিল, তা কাঁপিয়ে দিয়েছিল পুরো বাংলাদেশকে। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে, সব কষ্টের ইতি ঘটিয়ে সোমবার রাতে এই তরুণ চলে গেছেন না ফেরার দেশে। পটুয়াখালীর বাউফলের ছেলে রাজীব যখন তৃতীয় শ্রেণিতে, তখনই মারা যান তার মা। বাবাও চলে যান রাজীব অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে খালার বাসায় থেকে, কঠোর পরিশ্রমে স্নাতক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওই তরুণ।
জানা যায়, তিতুমীর কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে আর আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় নিজের পাশাপাশি ছোট ২ ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি। সদ্য কৈশোরে পৌঁছানো মেহেদী জানে না, কীভাবে এই বিপদ মোকাবিলা করা সম্ভব। সে ভাবছে, সরকার যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে অন্তত লেখাপড়াটা হয়ত চালিয়ে দিতে পারবে তারা। এখন শুধু আমাদের খালা, মামা, আর সরকার আছে। সরকার থেকে যদি একটু সহায়তা পাই।
বড় ভাইয়ের জীবন সংগ্রাম মেহেদীর ছোট মনেও দাগ কেটেছিল। ছোটবেলা থেকেই ভাইয়ার পড়াশোনায় অনেক আগ্রহ ছিল। নিজে নিজেই বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়ে চলে আসত, প্রাইভেট টিউশনি লাগেনি। খুব সমস্যা না হলে কারও সাহায্য ভাইয়া নিতে চাইত না।পিডিএসও/মুস্তাফিজ