নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ
রাজধানীর কিছু এলাকার ওয়াসার পানিতে বেশ কিছুদিন ধরেই ময়লা আর দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাই পানি ব্যবহারে মোটেও স্বস্তি পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, ওয়াসার পানি চোখে দিলেই জ্বালাপোড়া করছে, পানি ফোটালেও গন্ধ যাচ্ছে না। মালিবাগ ও শান্তিবাগ এলাকার বাসাবাড়িতে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ পানিতে পয়োবর্জ্য, আবর্জনা ও উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, এসব পানি খাওয়া তো দূরের কথা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারও করতে পারছে না মানুষ। প্রতিদিন ভবনে ভবনে শত শত জার পানি ঢুকছে। বাইরে থেকে আসা এসব পানির মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও নিরুপায় হয়ে মানুষ এসব গ্রহণ করছেন। এলাকাবাসী তাদের সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। খাবার জন্য সবাই এখন জারের পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এদিকে ঢামেকের সহকারী অধ্যাপক ডা. সুদীপ রঞ্জন দেবের মতে, ক্লোরিন মেশানো পানি পান করলে হঠাৎ বমি অথবা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
মালিবাগ ও শান্তিবাগ এলাকা ঘুরে এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকার পেতে সেবাগ্রহীতারা মুখিয়ে থাকলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। ১৯৮ শান্তিবাগের ইস্টার্ন লিংক ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, এ এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ পানি খাওয়া তো দূরের কথা গোসল, রান্নার কাজে ব্যবহার করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এ ভবনের ২০টি ফ্ল্যাটে প্রতিদিন অন্তত ৫০টি জার রাখা হচ্ছে।
মালিবাগ আয়েশা কমপ্লেক্সের পঞ্চমতলার বাসিন্দা মো. হাসান মিয়া বলেন, ঢাকা ওয়াসার যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, সে পানি খাওয়া তো দূরের কথা, ব্যবহার করতে গা শিউরে ওঠে। কেঁচোর মতো চিকন পোকা, চুল ও ময়লা পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে আমি বাসার ট্যাবে ছাঁকনি দিয়েছি। এরপরও এ পানি নাকে নিলে বমি আসে, উৎকট দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। ২১১, শান্তিবাগের বাসিন্দা মো. বাবুল মিয়া বলেন, এ এলাকায় ঢাকা ওয়াসার নতুন পানির লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এ কাজ করতে গিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন ও পানির লাইন অনেক জায়গায় এক হয়ে গেছে। এতে করে পানির লাইনে পয়োবর্জ্য ঢুকে পড়েছে। আমাদের বাসায় পয়োবর্জ্য মিশ্রিত পানি আসছে।
ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়ার খান বলেন, শান্তিবাগ ও মালিবাগ এলাকার পানির সমস্যার কথা আমার জানা নেই। বিষয়টি খবর নিয়ে দেখব। যদি এমন অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে ওই এলাকার পানি নিয়ে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করব এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
২১৫, মালিবাগের বাসিন্দা অমিত দাস বলেন, রাত ১১টার আগে এ বাসায় পানি আসে। তাও পরিমাণে খুবই কম। এসব পানি ব্যবহার করাও সম্ভব হচ্ছে না।
অপরদিকে ওয়াসার পানির কারণে অসুস্থ সহধর্মিণীর কথা জানাচ্ছিলেন রাজধানীর বেগুনবাড়ির বাসিন্দা মন্তাজ আলী। কিছুদিন ধরে এ এলাকায় ওয়াসার লাইন থেকে আসছে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। শুধু বেগুনবাড়ি নয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার জাফরাবাদ আজিজ খান রোড, ওয়ারী, শাজাহানপুর, গ্রীন রোড, পুরানা পল্টনসহ বেশ কিছু এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নিয়ে নানা অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের।
এদিকে রাজধানীর শান্তিবাগে ১৭ নম্বর লেনের গলিতে স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে শুরু হওয়ার পরপরই। এতে জায়গাটি পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে পরিবেশ। স্থানীয় কাউন্সিলরের অভিযোগ, কিছু নির্দিষ্ট লোকের কারণেই বন্ধ আছে কাজ। বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে মেয়রের প্রতি আবেদনও জানান তিনি। রাজধানীর শান্তিবাগের ১৭ নম্বর লেনের মোমেনবাগ গলি। এই গলিতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার একটি মাত্র রাস্তা এটি। এই রাস্তার দুই পাশে আছে কয়েকটি বহুতল ভবন, কাঁচাপাকা বাড়িসহ দোকানপাট।
রাস্তায় স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কারের জন্য গেল বছরের জুলাইয়ে এসব পাইপ রাখা হয় রাস্তার ওপর। তখন থেকেই শুরু হয় ভোগান্তি। রাস্তা কেটে পুরনো পাইপ উঠিয়ে নতুন পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আর হঠাৎ করেই ৪ মার্চ কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার। দু’দিন পর কাজ শুরু হলেও পরদিন আবারো বন্ধ হয়ে যায়। কাজ বন্ধ রাখায় ৪০ ফুট রাস্তার কাটা অংশে ময়লা পানির দুর্গন্ধে দুর্বিষহ এলাকার পরিবেশ।
পিডিএসও/তাজ