গাজী শাহনেওয়াজ

  ২১ মার্চ, ২০১৮

তৈরি হচ্ছে কম ঝুঁকির নতুন ইভিএম

সুরক্ষিত করে তৈরি করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নতুন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন—ইভিএম। নতুন ইভিএমে ১০ রকমের সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। এর সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যয় সংকোচন নীতি। ঝুঁকি নেমে আসছে শূন্যের কোটায়। কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভিএম পরিচালিত কেন্দ্রের নির্বাচন নিরপেক্ষ, সহজ এবং সময়বান্ধব হবে। জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে এটা ব্যবহারে তাই কমিশন নীতিগত অনুমোদন দিচ্ছে। তবে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি খান মো. নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন।

এদিকে, ত্রুটিযুক্ত ছিল পুরনো ইভিএম মেশিন। প্রত্যেকটি নির্বাচনে ইসির জন্য ঝুঁকি থাকত ৬ ধরনের। এগুলোর মধ্যে ভোটারের পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ পরীক্ষার ব্যবস্থা ও প্রদত্ত-গৃহিত ভোটের কাগজী রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, কন্ট্রোল ইউনিটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভোটের ফল প্রকাশ না করতে পারা এবং মেশিনের ব্যাটারি সংশ্লিষ্ট সমস্যা। তাই পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সুরক্ষিত ইভিএমকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১/১১ এটিএম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি কেনা হয়। নির্বাচনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের প্রধান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুত করা ৭০০ ইভিএম কিনলেও এগুলো পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না।

হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১ নং ওর্য়াডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে। পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।

পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় ১/১১ কমিশনের স্থলে বিধির নিয়মে নতুন কমিশন হিসেবে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ী রকিব উদ্দিন কমিশন দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদে রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে পুরো বিতর্কের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে কমিশনার হিসেবে মেয়াদপূর্ণের আগে ইভিএম ব্যবহার করেনি। তবে, নতুন ইভিএমের প্রচলন চালু রেখে যায়। আর গত ফেব্রুয়ারিতে খান মো. নুরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন প্রবর্তিত ইভিএমে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৪১ নং কেন্দ্রের ৬টি কক্ষে ব্যবহার করে। কিন্তু পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হয়নি। পুরনো ইভিএমের মতো ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন শেষ করে। পরবর্তীতে সুরক্ষিত ইভিএম তৈরিতে যত ধরনের সম্ভাব্য উপায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখে মাঠে নেমে পড়ে ইভিএমের কারিগরি টিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইসির কারিগরি টিম ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সুবিধা, ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা এবং সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে মানসম্মত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটানো সুপারিশ ও পরামর্শ দেয়। এর আগে বিএমটিএফের একটি কারিগরি টিমকে তিন দিনব্যাপী (২১-২৩ নভেম্বর’১৭) ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি-১৮ ইভিএম বাস্তবায়ন কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে টেকনিক্যাল কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি কারিগরি সাব-কমিটি তাদের সুপারিশ পেশ করে।

ইভিএমের কারিগরি কমিটির কার্যপত্রের তথ্যমতে, এই প্রযুক্তি নির্বাচনের ভোটে ব্যবহারের মাধ্যমে ১০টি সুবিধার কথা তুলে ধরেন যার মধ্যে; ভোটগ্রহণের আগে মেশিন চালু না হওয়াও মেশিন ছিনতাই হলেও অবৈধ ভোটদান বন্ধ;, পাসওর্য়াড সুরক্ষিত থাকায় অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরে মেশিন চালু করা সম্ভব নয়, নির্বাচনে পছন্দমতো ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েও ভোট কারচুপি না করতে পারা, ভোট শুরুর আগে-পরে শূন্য ভোটিং ও প্রিন্ট করার সুবিধা এবং স্বয়ংক্রীয়ভাবে ফলাফল প্রিন্ট, ঘোষণা ও বিতরণ সম্ভব।

সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ব্যবহার উপযোগী ইভিএমের সুবিধাগুলোর মধ্যে ইভিএমকে ব্যবহার বান্ধব করার লক্ষ্যে ভোটার শনাক্তকরণ মেশিন এবং ভোটিং মেশিন দুটি একত্রিত করে একটি মেশিনে রূপান্তরিত করা, ব্যালট ইউনিট কানসিল বোতামটি বাদ দেওয়া, ব্যালট ইউনিটের ভোট প্রদানের বোতামগুলো বড় আকারের ও ভিন্ন রঙের করা এবং বোতামের পাশের বোতামটি একটু বড় আকারে করা, ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর ভোটারের সন্তুষ্টির জন্য ধন্যবাদ শব্দ যুক্ত করা, ইভিএমের কাঠামো, টাচ স্ক্রিন, কি-বোর্ড এবং ভোটদান বোতামগুলোর মান উন্নত করা, ভোটার ভ্যারিফিকেশন মেশিনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টরটি মেশিনের মধ্যে সংযুক্ত (ইন বিল্ট) করা, কিউআর কোড মুদ্রণ বাদ দিয়ে একটি মেশিনের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা, ইভিএমের পুরো প্রটোকল, বিজনেস প্রসেস, সোর্সকোড ইত্যাদির ওপর রাইট আপ প্রস্তুত করা ইসির সার্বিক তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ করা এবং ইভিএম নিরাপদে ব্যবহারের জন্য মেশিন অনুযায়ী, সুরক্ষা বক্স ব্যবহার করা।

ইভিএম-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কারিগরি সাব-কমিটির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ইভিএমের আইন-বিধি সংশোধন করা, ভোটগ্রহণের সময় যন্ত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি এড়ানোর জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত কয়েকজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ রাখা, ভোটারদের আস্থা অর্জনের জন্য সাময়িক ইভিএম মেশিনে কাগজে মুদ্রিত ব্যালট পেপার অডিট ট্রায়েল রাখা এবং ভোটারের আস্থা অর্জনের জন্য ভোটদানের পর পরই ডিজিটাল ব্যালটের পুরো স্ক্রিনজুড়ে তার প্রদানকৃত ভোটের প্রতীক প্রদর্শন করার ব্যবস্থা রাখা।

ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, সভায় ইভিএম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে এগুলো ব্যবহার করা হবে। ভোটারদের মধ্যে যদি আস্থা অর্জন করা যায় তাহলে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে—এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইসি,নির্বাচন কমিশন,ইভিএম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist