গাজী শাহনেওয়াজ

  ২০ মার্চ, ২০১৮

পাঁচ সিটিতে ভোট দু’ধাপে

রমজানের আগে দুটি পরে তিনটি, খুলনা ও গাজীপুরে তফসিল ৩১ মার্চ

দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনে দুই ধাপে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই অনুযায়ী, পবিত্র রমজানের আগে দুটি এবং পরে তিনটিতে ভোট নেওয়া হবে। রমজানের আগে অর্থাৎ মে মাসের মাঝামাঝি নেওয়া হবে খুলনা ও গাজীপুর সিটির ভোট। এ লক্ষ্যে চলতি মাসের শেষ কর্মদিবসে (৩১ মার্চ) ওই দুসিটির তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি; এদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার।

এছাড়া বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহীতে ভোট ঈদুল ফিতর পরবর্তী সময়ে করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন পর দুই ধাপে সিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলো বর্তমান খান মো নুরুল হুদার কমিশন। তবে আরপিওসহ সাতটি আইনের সংশোধনীর খসড়া গতকালও অনুমোদন দিতে পারেনি কমিশন; আরো পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।

এদিকে, নিবন্ধিত দল হিসেবে হালনাগাদ তথ্য দিতে ব্যর্থ ‘নাগরিক আন্দোলন’কে শো’কজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে আবেদন করা ৭৫টির মধ্যে ১৯টির যাচাই-বাছাইয়ে অযোগ্য হয়েছে, আর যোগ্য ৫৬ দলকে ১৫ কার্যদিবস সময় দিয়ে কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করার জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল সোমবার একাধিক এজেন্ডা নিয়ে হয়ে যাওয়া কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও নথি অনুমোদন করা হয়। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-কে এম নুরুল হুদাসহ চার কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ মোট ২৬জন কর্মকর্তা অংশ নেন। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে এ বৈঠক ।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এটি ছিল কমিশনের ২২তম সভা। সভায় ৮টি এজেন্ডা ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—আইন ও বিধি সংশোধন; সিটি করপোরেশন নির্বাচন; ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন অবহিতকরণ ও নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত। অন্য আরো এজেন্ডা হচ্ছে—একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার; জাতীয় পরিচয়পত্রে হিন্দু বিবাহিত নারীদের নাম পরিবর্তন; বিভিন্ন নির্বাচনের জন্য ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) উন্নয়ন ও ক্রয় সংক্রান্ত।

সিটির নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, পবিত্র রমজানের আগে-পরে দুই ধাপে পাঁচ সিটিতে ভোট নেওয়া হবে। আর আসন্ন কমিশন সভায় এসব বিষয় ফয়সালা হবে।

ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কমিশন সভায় ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব সিটির প্রথম সভা আগে হয়েছে, সেগুলোর ভোট আগে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সভায় বিস্তারিত তফসিল নিয়ে আলোচনা হয়নি। আগামী ৩১ মার্চ এই বিষয়ে আলোচনায় সিদ্ধান্তের পর তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা আছে।

নিবন্ধিত দলের শর্তাদি প্রতিপালন প্রসঙ্গে সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩৮টি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। বাকি দুটি দলের মধ্যে গণফোরাম ৬ মাসের সময় চেয়েছে। কমিশন বিস্তারিত আলোচনা করে এ দলটিকে ৩ মাসের সময় দিয়েছে। আর নাগরিক আন্দোলন প্রতিবেদন দাখিল না করায় দলটির নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না—এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হবে। নোটিসের জবাব না দিলে এই দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

নতুন আবেদন করা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ৭৫টি দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় ১৯টির আবেদন নামঞ্জুর করেছে কমিটি। বাকি ৫৬টির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ দলগুলোকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ১৫দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

আরপিওসহ অন্য আইন ও বিধি সংশোধন প্রসঙ্গে ইসির অবস্থান জানিয়ে সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বাধীন কমিটি আরপিওসহ সাতটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি আরপিও বাংলা সংস্করণের প্রস্তাবও এসেছে।

কমিশন বলেছে, আইন সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তবে এত অল্প সময়ে সম্ভব নয়। আরেকটি দিনে আলোচনা করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভায় ইভিএম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে এগুলো ব্যবহার করা হবে। ভোটারদের মধ্যে যদি আস্থা অর্জন করা যায় তাহলে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে হিন্দু বিবাহিত নারীদের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিশন সার্টিফিকেট অনুযায়ী, নাম সংশোধনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এছাড়া আগামী নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও ইভিএম কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো পাইলটিং করার জন্য সভায় বলা হয়েছে।

জানা গেছে, গাজীপুর সিটিতে ২০১৩ সালের ৬ জুলাই ও খুলনায় একই বছরের ১৫ জুন ভোটগ্রহণ হয়। প্রথম সভার দিন থেকে ৫ বছর মেয়াদ শেষ হবে ৪ সেপ্টেম্বর ও খুলনা সিটিতে ২৫ সেপ্টম্বর। এইচএসসি পরীক্ষার পর ও রমজানের আগে এ দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা রেখে তফসিল ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়। পরে কমিশন সভায় ৩১ মার্চ আরেকটি সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভার পরই তফসিল ঘোষণা করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গাজীপুরের সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৯টি, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৩৯২টি এবং কক্ষের সংখ্যা ২২৮৯টি। এ নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা করা হচ্ছে ইসির উপসচিব মো. মতিয়ার রহমানকে এবং সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হচ্ছে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গাজীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শ্রীপুর গাজীপুর। আর খুলনায় সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩১টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২২৮টি এবং কক্ষের সংখ্যা ১৪২৮টি। এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হচ্ছে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, বরিশাল এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হচ্ছে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট। এছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড প্রতি একজন করে এবং প্রতি একটি সাধারণ ওয়ার্ডে একজন করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে এ দুটি সিটিতে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্বাচন কমিশন,ইসি,পাঁচ সিটিতে ভোট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist