reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ মার্চ, ২০১৮

আগামীকাল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

আগামীকাল শনিবার, ঐতিহাসিক ১৭ মার্চ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অবশ্য তিনি কখনও নিজের জন্মদিনে কেক কাটা এবং মোমবাতি জ্বালাতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন জনগণের জন্যই তাঁর মৃত্যু এবং জীবন। একাত্তরের সেই উত্তাল দিনগুলোর ১৭ মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। এদিন জনতা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্মদিনই কি আর মৃত্যু দিনই বা কি? সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি জনগণের একজন। জনগণের জন্যই তাঁর মৃত্যু এবং জীবন। পরিষ্কারভাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি জন্মদিন পালন করেন না। জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালান না এবং কেকও কাটেন না।

তবে ওই দিন বায়তুল মোকারম মসজিদে আছর নামাজের পর বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বিন সায়িদ জালালাবাদী। পর দিন ১৮ মার্চ দৈনিক পূর্বদেশ, ইত্তেফাক ও আজাদ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। মাহমুদ হাসানের ‘দিনপঞ্জি একাত্তর’ এবং ড. মোহাম্মদ হান্নানের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থেও একাত্তরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সংক্রান্ত এই বিবরণ পাওয়া যায় ।

‘দিনপঞ্জি একাত্তরে বলা হয়, এদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডস্থ বাসভবনে গিয়ে তাঁদের প্রানপ্রিয় নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ছাড়াও ছিল তাঁর (বঙ্গবন্ধু) ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের ষোড়শ দিবস। সকাল ১০টায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করেন।

কড়া সামরিক প্রহরার মধ্যে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক প্রায় এক ঘন্টা স্থায়ী হয়। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে এলে প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষামান দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেন। তিনি এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে নিজ বাসভবনে ফিরে যান। বাসভবনে পৌঁছানোর পর দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের আনুরোধে বঙ্গবন্ধু তাঁদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় মিলিত হন। এসময় জনৈক বিদেশী সাংবাদিক বাংলাদেশের নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে জানতে চান ৫২তম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কামনা কি?

জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের সার্বিক মুক্তি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি জন্মদিন পালন করেন না। তিনি বলেন, আমার জন্মদিনে মোম বাতি জ্বালাই না, কেকও কাটিনা। তিনি আরও বলেন, আমি জনগণেরই একজন। আমার জন্ম দিনও কি, আর মৃত্যু দিনও কি। আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোন মুহুর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে।

লেখক কবি সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রকৃতপক্ষেই ছিলেন একজন ভূমিপুত্র এবং গণমানুষের নেতা। তাঁর জীবনটাই ছিল দেশ এবং মানুষের জন্য উৎসর্গিত। ফলে আলাদা করে ব্যাক্তিগত কোন কিছু তিনি উদযাপন করেননি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন গণমানুষের মানুষ বলেই জন্মদিন নিয়ে তার এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বলতে পেরেছেন তিনি জন্মদিন পালন করেন না।

এদিকে জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানিয়েছেন। ১৭ মার্চ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া এদিন সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে হাসপাতালগুলোতে ‘শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতা, পুষ্টি ও খাদ্য’ সম্পর্কে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

প্রসঙ্গত শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের এই দিনে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার ৪ কন্যা এবং ২ পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন,ঐতিহাসিক ১৭ মার্চ,জাতির জনক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist