গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৪ মার্চ, ২০১৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপে বিব্রত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

এ-টু ভিসাপ্রাপ্তরা নিরাপত্তাহীনতায়

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপ বেড়েছে। এ বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ নয় বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও; যারা এ-টু ভিসাপ্রাপ্ত। এ ঘটনায় বিব্রত খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ বিকেল ৩টায় জরুরি সভা ডেকেছে। সভায় পুলিশের হস্তক্ষেপে লাগাম টানতে এ সভা থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুরক্ষা বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যে জাতিসংঘসহ বিদেশি অনেক রাষ্ট্রের বন্ধুরা বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমার সরকারের এই নিধনযজ্ঞকে ওই সব রাষ্ট্রের প্রধানগণ ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এসব বন্ধু ও সহযোগী রাষ্ট্রের অনেক প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসহ নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, যেসব বিদেশি প্রতিনিধি এখানে ‘এ-টু’ ভিসা নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছেন পুলিশ তাদের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপসহ নানাভাবে হয়রানি করছে বলে গুরুতর অভিযোগ এসেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় সুরক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভায় বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, মানবিক কারণে বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে উদার মানবতার রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। কানাডা ও তুরস্কসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধান ও রানিরা কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলনে শক্ত বিবৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ মিয়ানমার জান্তা সরকারের একটি গোষ্ঠীর ওপরে নির্যাতন ও নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

এর আগে রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠীর ওপরে মিয়ানমার জান্তা সরকারের চালানো নিধনযজ্ঞ এবং এসব নিরাশ্রয় নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে বিরল মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ একটি দৈনিকে প্রকাশিত নিবদ্ধে এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার প্রধানকে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু সরকারের সুনাম পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপে ম্লান হতে চলেছে।

সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এ বাহিনীর কতিপয় ব্যক্তি বিদেশি বন্ধুদের ওপর খবরদারি ও নানাভাবে হয়রানি করছে; যা গুরুতর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনায় নেয় মন্ত্রণালয়। কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদেশি যেসব অতিথি কাজ করছেন সবাই ‘এ-টু’ ভিসাপ্রাপ্ত। বাংলাদেশ সরকার তাদের ভিসা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সাহায্যে যেসব বিদেশি প্রতিনিধি কাজ করছেন তাদেরকে পুলিশের অযথা হয়রানির খববে রীতিমতো বিব্রত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সরকারের জারি করা ভিসা নীতিমালার কতিপয় ভিসা শ্রেণির বিধিবিধান ও শর্তাবলির সংশ্লিষ্ট অংশ সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন করা হয়। যার মধ্যে এ-টু ভিসা একটি। এই ভিসা পাওয়ার যোগ্যতায় বলা আছে, জাতিসংঘ ও তার অঙ্গসংগঠন, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক সংস্থা অফিসে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর আগমন ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বলা আছে, চাকরি-দাফতরিক দায়িত্ব পালন।

ভিসা ইস্যু, ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিকারী কর্তৃপক্ষ এবং ভিসা প্রদানের শর্তাবলির মধ্যে বলা আছে, এ-টু এর (ক) ধারায়, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সুপারিশ ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে ভিসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বহু ভ্রমণ সুবিধায় চাকরির পূর্ণকালীন মেয়াদে অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, যা কম হবে, ভিসা প্রদান করতে পারবে। শর্তাবলির খ ধারায় বলা আছে, ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ-সংস্থার সুপারিশ ও আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বর্ণিত শর্তাবলি অনুসারে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর বহু ভ্রমণসহ নিয়োগের পূর্ণকালীন মেয়াদে বা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, যাহা কম হবে, ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে এসবিতে রিপোর্ট, রেজিস্ট্রেশন করা ও নিরাপত্তা ছাড়পত্র গ্রহণের শর্তটি প্রযোজ্য হবে না।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করলে গত ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ৮ লাখের মতো নিবন্ধন করেছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদের নিবন্ধন শেষ করা হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা ক্যাম্প,পুলিশ,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,পুলিশের হস্তক্ষেপ,এ-টু ভিসা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist