reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ মার্চ, ২০১৮

বাংলাদেশের মেয়েরা পিছিয়ে নেই : প্রধানমন্ত্রী

নারী উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজে যদি নারী পড়ে থাকে; তাহলে এই সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। নারীদের অধিকার সুরক্ষিত করে তাদের অধিকার সৃষ্টি করে দেওয়া এবং সর্বক্ষেত্রে তাদের বিচরণ যেন নিশ্চিত হয়; সেটাই আমাদের লক্ষ্যে। আর সেই কাজটাই করে আমরা অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। বাংলাদেশের মেয়েরা পিছিয়ে নেই। যে বাঁধা ছিল; তা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিয়ে দিলেই মেয়ের ওপর থেকে দায়িত্ব চলে যায় না। বরং দায়িত্ব আরও বাড়ে। মেয়েকে যদি লেখাপড়া শিখিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে; সেটাই সমাজের জন্য সব থেকে ভালো। পরিবারের জন্যও সেটা একটা সুরক্ষা সুষ্টি করতে পারে।

রাজনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, ব্যবস্থা ও ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের পদচারণার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, সকল জায়গায় মেয়েরা কিন্তু তাদের স্থান করে নিয়েছে। একটু সাহসের সাথে এগিয়ে গেলেই কিন্তু স্থান করা যায়। মেয়েরা যখন কাজ করে; আমি মনে করি খুব ভালোভাবেই কাজ করে। তাদের দক্ষতা অনেক বেশি; কোনো সন্দেহ নাই।

নারী শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বাবা-মাও যখন দেখে যে, আমার মেয়ে লেখাপড়া শিখে সে যখন অর্থ উপার্যন করতে পারে, সংসারে সহযোগিতা করতে পারে; তখন আর বিয়ে দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করবে না। আর, বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে ছেলের বৌ যতটা না দেখে, মেয়েরা তার থেকে বেশি দেখে। এটাও বাবা-মার মনে রাখা উচিত, এটাও বাবা-মার চিন্তা করা উচিত। এটা খুব বাস্তব কথা আমি বললাম। অবশ্য মেয়েরাই তো কারো ছেলের বৌ হয়—সেটাও ঠিক। সেখানে আমি বলবো, আমাদের বোনদেরও সমানভাবে দেখা উচিত। বাবা-মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সকলের প্রতি সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত। নারীদের নিজের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব যথাযথ পালনের কথাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

চারটা বিভাগে মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পর্যায়ক্রমিকভাবে আমরা প্রতিটি বিভাগে এই পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট করবো। প্রতিটি বিভাগে আমরা মহিলা কারিগরি স্কুল ও কলেজ আমরা প্রতিষ্ঠা করে দেব। সে ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় সরকারি ট্রেনিং সেন্টার চালুর কথাও বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০টি সরকারি ট্রেনিং সেন্টার-টিটিসি চালু হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আমরা টিটিসি চালু করবো। এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই পড়াশোনার সুযোগ পাবে। সব উপজেলায় কর্মজীবী মহিলাদের জন্য হোস্টেল তৈরিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বল্প ব্যয়ে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা শহরে ৮টি হোস্টেল পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রতিটি জেলায় আমরা কর্মজীবী মহিলাদের জন্য এই হোস্টেল করে দেব। উপজেলা পর্যন্ত যেন হয়; সে ব্যবস্থা আমরা নেব।

নারীদের উন্নয়ন ছাড়া উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সমাজ উন্নত হবে কিভাবে? সমাজকে উন্নত করতে হলে নারী-পুরুষ সবাইকে সমান ভাবে সুযোগ করে দিতে হবে। সেভাবেই নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে তাদের শক্তি ও মেধা যেনো কাজে লাগে; তার ব্যবস্থাটাও করতে হবে। মেয়েদের আমরা সুযোগ না দিলে কোনো কাজই হবে না

সরকারের উদ্যোগে পাশাপাশি নারীদের এগিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু সাহস করে এগিয়ে যাওয়া সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। নারীর অর্থনৈতিক সাবলম্বিতার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাটা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের বসে থাকলে চলবে না। নিজেদেরও কাজ করতে হবে, লেখাপড়া শিখতে হবে এবং নিজেদের পায়ে দাড়াতে হবে।

মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে উচ্চ শিক্ষায় বৃত্তি দিচ্ছি। উচ্চ শিক্ষা বৃক্তির ৭৫ ভাগই মেয়েরা পায়। মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য দেশব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চলমান থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়েরা যেনো নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলতে পারে; সেই সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি।

সারাদেশে ৭৪টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হলেও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা তখনই কাজে মনোযোগ দিতে পারবে; যখন তার সন্তানটা সুরক্ষিত থাকবে। প্রত্যকটা জায়গায় ডে-কেয়ার সেন্টার করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের প্রতিটি উপজেলায় বিনা পয়সায় ১৮টা ট্রেডে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি চালনা থেকে শুরু করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণকালীণ সময়ে মেয়েরা কিছু ভাতা পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই তার মা ফজিলাতুন নেসা মুজিব ও বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং মহিলা ও নারী মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পাঁচজন নারীর হাতে জয়ীতা সম্মাননা তুলে দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মেহের আফরোজ চুমকী।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শেখ হাসিনা,প্রধানমন্ত্রী,নারী শিক্ষা,আন্তর্জাতিক নারী দিবস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist