সম্পাদকীয়

  ১৪ আগস্ট, ২০২০

ফিরে আসা প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে

করোনার তাণ্ডবে বিধ্বস্ত পৃথিবী। বিধ্বস্ত মানুষের দৈনন্দিন জীবন। একদিকে বেকারের চাপ তো আছেই। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে নতুন উপসর্গ চাকরিচ্যুতি। বিশ্বজুড়ে নতুন করে চাকরি হারিয়ে বেকারের খাতায় যুক্ত হয়েছে লাখো কোটি মানুষ। দেশ-বিদেশের সব স্থানে একই চিত্র। বাংলাদেশ এমনিতেই বেকারত্বের চাপে নূব্জ। শুরু হয়েছে বিদেশে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরার হিড়িক। প্রচুর প্রবাসী এখন চাকরিচ্যুত হয়ে দেশে ফিরেছেন। তারা কেউ ভালো নেই। অনেক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। অথচ এদের শ্রমার্জিত অর্থে বাংলাদেশ উন্নয়নের রেলে চড়তে সক্ষম হযেছিল এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।

আমরা মনে করি, যারা এত দিন তাদের সর্বস্ব দিয়ে দেশের উন্নয়নের চাকাকে সচল রাখার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন—তাদের এই দুঃসময়ে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো দেশ ও জাতির দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

চলতি সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে বিদেশফেরত ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি জিবিকা সংকটে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক জরিপে এ কথা জানানো হয়। বাংলাদেশ সরকার ও আইওএমের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এ জরিপে ১ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত অভিবাসীদের ওপর পরিচালিত জরিপের মধ্য দিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, ফেরত আসা অভিবাসীরা জীবিকা, আর্থিক সংকট (উপার্জনের অভাব এবং বর্ধিত ঋণ) এবং স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়সহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একেকজন অভিবাসী কর্মী গড়ে তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে সহায়তা দিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত ও বৃহৎসংখ্যক জীবিকাহীন অভিবাসী কর্মীদের ফেরত আসার ফলে সারা দেশে রেমিট্যান্সনির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ শতাংশ বলেছে, যে দেশে তারা ছিলেন, সে দেশ ত্যাগ করতে বলায় তারা বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। ২৩ শতাংশ বলেছেন, তারা কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং পরিবারের কাছে ফেরত আসতে চেয়েছেন। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ জানান, তাদের পরিবার ফেরত আসতে বলায় তারা ফিরে এসেছেন। বাকি ৯ শতাংশের বক্তব্য, তাদের বলা হয়েছে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আটকে পড়ার ভয়ে তারা ফেরত এসেছেন। সাক্ষাৎকারের ৫৫ শতাংশ বলেছেন, তাদের ওপর বর্ধিত শোধ না করা ঋণের বোঝা রয়েছে। আবার এই ৫৫ শতাংশের ৫৫ ভাগ—পরিবার ও বন্ধুর কাছে ঋণগ্রস্ত, ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), স্বনির্ভর দল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণগ্রস্ত। ১৫ শতাংশ পাওনাদারদের কাছে ঋণগ্রস্ত। পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণগ্রহণকারীদের ৮৬ শতাংশ বিনাসুদে ঋণ নিয়েছেন।

অন্যদিকে এমএফআই, এনজিও এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে গৃহীত ৬৫ শতাংশকে ঋণের জন্য সুদ দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। মহাজন বা সুদে টাকা ধার দেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ ঋণগ্রহীতাকে সুদ গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ শতাংশ।

আমরা মনে করি, কোভিড-১৯ মহামারির সময় সবচেয়ে বিপদাপন্ন গোষ্ঠীদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন অভিবাসী কর্মীরা। বৈশ্বিক চলাচলের ওপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড মহামারি সৃষ্ট মন্দার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী এবং রেমিট্যান্সনির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর। সুতরাং এ মুহূর্তে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানো দেশ ও জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আশা করি, জাতি এবং রাষ্ট্র সেই কর্তব্য পালনে এগিয়ে যাবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রবাসী,সম্পাদকীয়,কোভিড-১৯
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close