সম্পাদকীয়

  ১৪ জুলাই, ২০২০

চিকিৎসার নামে প্রতারণা বন্ধ হোক

স্বাস্থ্যসেবা জনগণের একটি মৌলিক চাহিদা। মানবসম্পদ উন্নয়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) ও ১৮(১)-এ চিকিৎসাসেবা ও জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতিকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের আপ্রাণ চেষ্টার পরও এখনো তা শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে চিকিৎসার নামে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে এই করোনাকালে কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনৈতিকতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে সাধারণ জনগণ আশান্বিত হলেও তার বাস্তবায়ন হয়েছে কমই। বরং চিকিৎসাক্ষেত্রে নানা অনিয়ম দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল যে প্রতারণা করেছে, এরই মধ্যে তা বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। হাসপাতালটির লাইসেন্স বা চিকিৎসা প্রদানের ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০১৪ সালে। এত দিন নবায়ন ছাড়াই চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর ‘সেবা’ দিয়ে আসছিল এই হাসপাতাল! করোনাকালে তারা বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার জন্য তালিকাভুক্ত হলেও রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে। বিনামূল্যে চিকিৎসার চুক্তি অনুযায়ী রোগীর নমুনা ঠিকই বিনামূল্যে পরীক্ষা করেছে বিভিন্ন সরকারি গবেষণাগারে। হাসপাতালটি স্পষ্টতই প্রতারণা, দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে। তারা চিকিৎসাপ্রার্থীর কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং সরকারি বিল উত্তোলনের মাধ্যমে গাছেরটা যেমন খেতে চেয়েছে, তেমনি কুড়াতে চেয়েছে তলারটাও। এই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. সাহেদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। এরই মধ্যে রিজেন্টের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে হাসপাতালটি যা করেছে, তা নিছক প্রতারণা বা দুর্নীতি নয়; এটা নিঃসন্দেহে সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। অন্যদিকে প্রায় একই অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফকে। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, করোনার পরীক্ষা না করেই নকল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা। এর আগে তার স্বামীসহ আরো কয়েকজনকে এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য, জেকেজির প্রতারণায় আরিফুর রহমানসহ আরো কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর থেকেই দেশে তোলপাড় শুরু হয়। হাজার হাজার ভুক্তভোগী করোনার পরীক্ষা করাতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় টনক নড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ মহলে। তারপরই বেরিয়ে আসতে থাকে স্বাস্থ্য কেলেঙ্কারির অজানা সব কাহিনি।

বর্তমান সরকার সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে কোভিড-১৯ রোগীর উল্লম্ফন ঘটায় সরকার ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও সেবা প্রদানের অনুমতি প্রদান করেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশই লাইসেন্স নবায়ন করেনি। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় করোনা রোগীর সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অনুষঙ্গেরও অভাব রয়েছে। জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপ্রাণ চেষ্টার পরও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ অব্যবস্থা কারো কাম্য নয়। বরং সার্বিক দিক বিবেচনায় এ ক্ষেত্রে এমন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি যারা চিকিৎসার নামে নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রতারণা,চিকিৎসা,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close