সম্পাদকীয়

  ১২ জুলাই, ২০২০

বন্যা মোকাবিলায় সতর্কতা জরুরি

দুর্যোগ যেন কোনোভাবেই কাটছে না। একের পর এক দুর্যোগ আছড়ে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার এই পাললিক ভূমিতে। একদিকে করোনাভাইরাসের তান্ডবে দিশাহারা। বিশ্বের অর্থনীতিকে ভেঙেচুরে একাকার করে দিয়েছে ও দিচ্ছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ, উৎপাদনে স্থবিরতা, বিশ্ববাজারে নেমেছে বন্ধ্যত্ব। আমরাও এর বাইরে থাকতে পারিনি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এরপর খাঁড়ার উপর মড়ার আঘাত হিসেবে আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে সাইক্লোন ও বন্যা। সাইক্লোন আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতেই আগ্রাসী ভূমিকায় এখন বন্যা। একদিকে করোনার করালগ্রাসে পৃথিবীটা কাঁপছে। প্রতিহত করা এখনো সম্ভব হয়নি। সবাই যেন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। ইতোপূর্বে একটি দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য দেশকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। এবার তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। আর সে কারণেই দ্বিমুখী দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাড়তি সতর্কতাসহ বাংলাদেশকে একটু ভিন্নভাবেই ভাবতে হবে।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবনতি হতে পারে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার পরিস্থিতি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়া তথ্যমতে, আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের উত্তরাঞ্চলের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার প্রদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রবল। ফলে এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে চারটি নদীর পানি। এরমধ্যে তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। নদীর তীরবর্তী মানুষ এবার বড় বন্যার আশঙ্কা করছেন। মৃতপ্রায় তিস্তা তৃতীয় ধাপে যেন আবার ফিরে পেয়েছে তার হারানো যৌবন। আর এখান থেকেই অনুমান করা যায় নদীর তীরবর্তী মানুষগুলোর আশঙ্কার ভবিষ্যৎ। ইতোমধ্যেই তিস্তা অববাহিকার লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চাষিরা।

সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী অববাহিকার নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাট, ভুট্টা, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ছে জেলার অন্যান্য নদ-নদী ও হাওরে। জেলার ১১ উপজেলার চার পৌরসভা ও ৮২ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হাজার পরিবার। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এটি হলো বর্তমান চিত্র। আগামীকাল চিত্রপট আমূল বদলে যেতে পারে। কেননা, আবহাওয়া অধিদফতর যে ঘোষণা দিয়েছে তা কার্যকর হলে ভারতের সেসব অঞ্চল থেকে নিচের দিকেই পানি প্রবাহিত হবে। আর তাতে আমাদের বিপদ বেড়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আর এজন্যই বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন পড়বে। আগাম পরিকল্পনা গ্রহণই হবে বিপদ মোকাবিলার উত্তম পন্থা। এ সময় করোনার দায়িত্ব দেশের প্রত্যেক নাগরিককে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, মহামারি ও বন্যার দ্বিমুখী চাপ সরকারের একার পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা মনে করি, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,বন্যা মোকাবিলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close