সম্পাদকীয়

  ০৯ জুলাই, ২০২০

গ্রামীণ অর্থনীতির পাশে দাঁড়াতে হবে

ভালো নেই। আমরা যেন এক নেই রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছি। করোনাভাইরাস অনেকটা ঘাড় ধরে আমাদের সেই রাজ্যে ঢুকতে বাধ্য করেছে। রাজ্য বলতে এখানে গোটা বিশ্বকেই বোঝানো হয়েছে। আমাদের চারপাশে এখন নেই নামের শব্দের সমাহার। আমাদের হাতে এখন ভাইরাস ভ্যাকসিন নেই। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। অনেকটা অন্ধকারেই রয়ে গেছে চিকিৎসাব্যবস্থা। সংক্রমণের সংখ্য কেবল বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। কোনো কিছুতেই যেন প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। এ মুহূর্ত পর্যন্ত সভ্যতা যেন নতজানু হয়ে তাকিয়ে আছে ভবিষ্যতের দিকে। কেবল ভবিষ্যৎই জানে আমরা চলেছি কোথায়!

কেবল প্রাণহানিই আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ নয়। করোনাভাইরাসের অদৃশ্য আক্রমণে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। আমরাও এর বাইরে নই। আর সে কারণেই করোনা মহামারির বিশ্বমন্দায় দেশের অর্থনীতিও ভালো নেই। দীর্ঘদিন লকডাউন ও সরকারি ছুটি শেষে কল-কারখানা ও অফিস খুললেও স্বাভাবিক হয়নি ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উৎপাদন ব্যবস্থা। এ ছাড়া করোনাভীতিতে মানুষ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক চলাফেরায় ফিরতে পারেনি। উৎপাদন ও ব্যবসা বন্ধ থাকায় দিন দিন কর্মহীন হচ্ছে বিশালসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ। আবার চাকরি না গেলেও বেসরকারি পর্যায়ে অধিকাংশ মানুষ বেতন পাচ্ছেন অর্ধেক বা তারও কম। এ অবস্থায় গত তিন-চার মাসে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দারুণভাবে। শহুরে জীবনের এমন নাকাল অবস্থায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। দেশের বড় বড় শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ ইতোমধেই গ্রামে ফিরে গেছে। শহরে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা হারিয়ে সে নিশ্চয়তা পেতে তাদের এই অবস্থানের পরিবর্তন। অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতি চফুা হয় যাদের টাকায়, সেই প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশে কর্মসংস্থান হারিয়ে বাধ্য হয়েই ফিরছেন গ্রামে। আবার বৈশ্বিক মন্দায় বিদেশে অবস্থানকারী গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ প্রবাসীদের আয়ও কমেছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির অক্সিজেন হিসাবে-খ্যাত এই খাতটিও করোনায় পর্যুদস্ত। গ্রামীণ কৃষিপণ্যের হাতবদলও কমে আসছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে গ্রামাঞ্চলে অর্থপ্রবাহ কমার পাশাপাশি বাড়ছে বেকারত্বের বোঝা। সব মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

এ কথা সত্য যে, কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। এরপরই প্রবাসী আয়ের অবস্থান। যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ। প্রবাসী আয় বাড়লে এবং ফসলের ভালো উৎপাদন হলে অর্থপ্রবাহ বাড়ে। চাঙা হয় গ্রামীণ অর্থনীতি। কিন্তু করোনার বিষাক্ত বৃত্তে আটকা পড়ে চরম বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের কৃষক থেকে শুরু করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন উপার্জন বন্ধ থাকায় তাদের সঞ্চিত অর্থ কমে আসছে। এ ছাড়া গ্রামীণ জনপদে মানুষের অর্থের প্রধান উৎস ধান ও চাল বিক্রি করে তাদের চাহিদা পূরণ করে। সেই ধান ও চালের বড় অংশ সরকার ক্রয় করে থাকে। এখানেও সরকারি কার্যক্রমে ধীরগতি বিরাজ করছে। ফলে এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। পাশাপাশি যারা মৌসুমি ব্যবসায় যুক্ত তাদের রয়েছে পুঁজি সংকট। আর সে কারণেই সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে জড়িতদের অংশগ্রহণও কমে গেছে। সরকার ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখলেও এর সুফল তাদের কাছে ঠিকমতো না পৌঁছানোর অভিযোগও কম নয়। সুতরাং এ মুহূর্তে যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাসহ ইতিবাচক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা না যায়, তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর দুর্যোগ নেমে আসতে পারে। সরকার এবং ব্যক্তি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহকে সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। বাঁচাতে হবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রাম বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গ্রামীণ অর্থনীতি,সম্পাদকীয়,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close