সম্পাদকীয়

  ০৭ জুলাই, ২০২০

জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে

বছরজুড়ে পশুর চামড়া সংগ্রহের বেশির ভাগই আসে কোরবানির ঈদে। এত পরিমাণ চামড়া স্বল্পসময়ে কিনতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়। এজন্য পর্যাপ্ত ব্যাংকঋণের দাবি ছিল কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের। কারণ করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালে প্রবল সংকটে আছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। এ অবস্থায় ব্যাংকঋণের সুবিধা ছাড়া তাদের পক্ষে পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণ প্রায় অসম্ভব। বস্তুত এসব দিক বিবেচনা করে আসন্ন ঈদুল আজহায় প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থপ্রবাহ সচল রাখার উদ্দেশ্যে এ খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশে অর্থনৈতিক কর্মপ্রবাহের জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি বিশাল উদ্যোগ। কারণ ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ আট বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। সচল এবং প্রকৃত কারণে ক্ষতিগ্রস্তরাই এ সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া কাঁচা চামড়া ক্রয়ে নতুন ঋণের আবেদনও করতে পারবেন সুবিধাভোগীরা। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। বিভিন্ন কারণে চামড়া খাতে বিদ্যমান ঋণ নিয়মিতভাবে পরিশোধিত না হওয়ায় কিছু কিছু ঋণ বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়ছে। ফলে এ খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে ব্যবসায়ীরা তা সহজে গ্রহণ করতে পারেন।

ঘোষিত সার্কুলার অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩০ জুনভিত্তিক ঋণস্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট নগদে আদায় সাপেক্ষে পুনঃতফসিল করার বিষয়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবে আদায়কৃত কিস্তি ডাউনপেমেন্ট হিসেবে গণ্য হবে না। গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ঋণ হিসাব শ্রেণিকৃত হয়ে থাকলে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সচল বা চলমান থাকলে এ সার্কুলারের আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধা প্রদান করা যাবে। কেস টু কেস ভিত্তিতে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ তলবি ও চলমান ঋণ সর্বোচ্চ ছয় বছর মেয়াদে এবং মেয়াদি ঋণ সর্বোচ্চ আট বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা যাবে। ফলে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ক্রয়ের উদ্দেশ্যে নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট গ্রহণের শর্ত শিথিল করা যাবে।

বলা সংগত, চামড়াশিল্প দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক রফতানিমুখী শিল্প। জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং মূল্য সংযোজনের নিরিখে এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। চামড়াশিল্পে সারা বছর ধরে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক জোগান আসে প্রতি বছর কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। এ সময় কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একদিকে মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণ করা যেমন সম্ভব হবে; তেমনি কোরবানিকৃত পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। আমরা আশা করি, চামড়া খাতের সব শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখবেন, যাতে জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত না হয় আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় স্বার্থ,সম্পাদকীয়,ব্যাংকঋণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close