সম্পাদকীয়

  ০৬ জুলাই, ২০২০

নৌপথ নিরাপদ করা জরুরি

নদীপথ নিরাপদ ও আরামদায়ক এ কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। আবহমানকাল থেকেই নৌপথ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সহজলভ্য এবং সুবিধাজনক মাধ্যম আজও তা অনস্বীকার্য। আর এই নৌপথকে কেন্দ্র করেই বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে স্থাপত্য ও সভ্যতা। গড়ে উঠেছে শহর, বন্দর ও ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম হয়ে থাকতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ সব সময়ই স্বল্পব্যয়ের পরিবহন মাধ্যম। কিন্তু তার কতটুকু সদ্ব্যবহার করতে পারছি, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিতর্কটি বেশ জোরালো। অতিরিক্ত যাত্রী এবং চালকদের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে একের পর এক ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। ফলে সড়কের মতো এ পথটিও দিনে দিনে অনিরাপদ হয়ে উঠছে। যদিও কোনো কোনো এলাকায় এটি পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম।

দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকারণ খোঁজায় তৎপরতার যেন শেষ নেই। অপরাধীকে চিহ্নিত করার কাজে ঘাম ঝরানোর লোক বা সংস্থার অভাব দেখা যায় না। চারপাশে আলোচনার বন্যা নামে। আলোচনা স্তিমিত হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আর কোনো খবর থাকে না। অদৃশ্য কোনো চাপে পার পেয়ে যান অপরাধীরা। এটাই এ দেশে দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ের বাস্তবচিত্র। অপরাধ করে নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যাওয়ার কারণে পরে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ফলে ভবিষ্যৎ নৌপথের নিরাপত্তাও হয়ে উঠে আরো বিপদগ্রস্ত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নিরপরাধ মানুষ এই নিরাপত্তাহীন যাত্রায় আর কত জীবন বলি দেবে? ভোগান্তি বয়ে বেড়াবে নিহতের পরিবার!

৩০ বছর ধরে চলে আসছে নৌপথে দুর্ঘটনা। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ৫৭০টি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ময়ূর ২-এর ধাক্কায় মর্নিং বার্ড নামের এক লঞ্চডুবিতে ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ পর্যন্ত গত ৩০ বছরে প্রাণহানি ঘটেছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের। সদ্য ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের তালিকায় অতীতের মতো অভিযোগের তীর চালকের অদক্ষতা ও গাফিলতির প্রতি। এখনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। তদন্তের পর প্রকৃত রিপোর্ট জানা যাবে। আর তত দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের। রিপোর্ট প্রকাশ হলেও বিচারের ফল অজ্ঞাত থেকেই যাবে। বিষয়টি আবার হয়তো রেফারেন্স হিসেবে আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে, যখন আরো একটি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হব আমরা। ভুলে যাব অতীত, ঝাঁপিয়ে পড়ব বর্তমানকে নিয়ে। নৌ-দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে নৌপরিবহন অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিএর তথ্য মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালকের অদক্ষতা আর গাফিলতিই দায়ী। প্রকৃত চালকের পরিবর্তে অন্য স্টাফের মাধ্যমে লঞ্চ চালনার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। ময়ূর-২ লঞ্চ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও মূল চালকের পরিবর্তে কোনো সহকারীর হাতে স্টিয়ারিং ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নৌ-দুর্ঘটনার আরো একটি কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তারা বলেছেন, ফিটনেসবিহীন নৌযান। ফিটনেস তদারকি করে নৌপরিবহন অধিদফতর। অধিদফতর ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করলে ফিটনেসবিহীনের সংখ্যা বাড়বে—বাড়বে দুর্ঘটনা এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা এ ধরনের স্বাভাবিকতা থেকে দূরে থাকতে চাই। চাই নিরাপদ নৌযাত্রা। আর এটাই নদীমাতৃক দেশ ও মানুষের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নৌপথ,সম্পাদকীয়,নৌ-দুর্ঘটনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close