সম্পাদকীয়

  ০৪ জুলাই, ২০২০

খামারিদের শঙ্কা মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে

এবার কোরবানির পশুর হাটে ভারতীয় গরু আসবে কী আসবে না এমন চিন্তায় কেউ রাতের ঘুম নষ্ট করছেন না। কারণ, গরু-ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোরবানির চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি। তথ্য মতে, উদ্বৃত্ত নয় লাখ। করোনা-বিধ্বস্ত দেশে এখন দুশ্চিন্তা হলো, খামার থেকে এসব গবাদি পশু কোরবানির পশুর হাটে পৌঁছাতে পারবে কি না। পৌঁছালেও তা বিক্রি হবে কি না। শুরুতেই এখন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের সর্বত্র। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে খামারিদের কপালে। একদিকে করোনা-তা-বে দেশের অর্থনীতি যে ভালো নেই, তা কম-বেশি সবারই জানা। সাধারণ মানুষের হাতে যে টাকা নেই, এ কথাও সত্য। তাহলে বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এ নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব মতে, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য ১ কোটি ১০ লাখ গবাদি পশু দরকার হবে। কিন্তু দেশের খামারগুলোতে ১ কোটি ১৯ লাখ গরু-ছাগল-মহিষ ও ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই চাহিদার তুলনায় ৯ লাখ বেশি। এদিকে এক করোনাভাইরাস-তা-বে কাঁপছে পৃথিবী। আমরাও সেই কম্পনের বাইরে থাকতে পারিনি। থাকাটাও সম্ভব ছিল না এখনো তা অব্যাহত রয়েছে সমান গতিতেই। গত তিন মাসে করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত বাজারে অর্ধেকের কম গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে। এই গরুগুলোও কোরবানির হাটে ওঠার অপেক্ষায় আছে। এগুলোর পরিমাণও কম নয়। ১০ থেকে ১৫ লাখ।

খামারিদের জাতীয় সংঘটন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব মতে, সরকার এবার কোরবানির হাটের যে চাহিদা নিরুপণ করেছে, সে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাদের মতে, বিক্রি ২০ শতাংশ কমে যাবে। কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তারা বলেছেন, ক্রেতাদের হাতে টাকা নেই। খামার থেকে হাটে গরু নিয়ে আসার মতো পুঁজির অভাব রয়েছে। পাশাপাশি ট্রাকভাড়াও বেশি। আবার অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনার কারণে মানুষের আর্থিক সামর্থ্য কমে এসেছে। ফলে অন্যান্য খাতের মতো গবাদি পশুর খামারিদেরও সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব মতে, দেশে সারা বছর যত গবাদি পশু বিক্রি হয়, তার অর্ধেকেরও বেশি বিক্রি হয় কোরবানির পশুর হাটে। দেশে করোনা-সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে সারা দেশে দিনে ৪৫ কোটি টাকার গরু কেনাবেচা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাংস বিক্রির জন্য কসাইদের কাছে এসব গরু বিক্রি করা হয়। কিন্তু গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বিক্রির পরিমাণ তলানিতে এসে দাঁড়ায়। দিনে ১০ কোটি টাকার বেশি গরু বেচাকেনা হয়নি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীরও একই ভাবনা। তিনি বলেছেন, করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের কাছে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এবার গরুর হাটে বিক্রি কম হতে পারে। তবে এ কথা সত্য, ভারতীয় গরু ছাড়া গরুর চাহিদা মেটানোর যে পরিকল্পনা সরকারের ছিল, তা পূরণ হয়েছে। উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে করোনার-তা-বে আমাদের সব সেক্টরের মতো এই সেক্টরও কিছুটা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে। তবে আমরা মনে করি, বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠাই আমাদের ধর্ম। আমরাও মন্ত্রীর কথার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে চাই, সব দুর্যোগের পাশে থেকে মোকাবিলা করাই রাষ্ট্রের কাজ। এ ক্ষেত্রে সরকার সে কাজটিই করবেন এটুকুই প্রত্যাশা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close