সম্পাদকীয়

  ০২ জুলাই, ২০২০

করোনার ঊর্ধ্বচাপ ঠেকাতে হবে

আমরা যেন প্রকৃত অর্থেই করোনাবৃত্তে আটকে গেছি। ব্যারোমিটারে মৃত্যুর পারদ ঊর্ধ্বমুখী। ৪০ থেকে ৬৪ জনের মধ্যে ওঠানামা করছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর এই প্রথম গত মঙ্গলবার এক দিনে ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এক দিনে ৬৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৮৪৭ জনে গিয়ে দাঁড়াল। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। করোনা প্রতিরোধে নানামুখী লড়াই করেও যেন এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসাটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ কথাও সত্য যে, বেরিয়ে আসতেই হবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধকে আরো জোরদার করে আমাদেরকেই তা কার্যকর করতে হবে।

আমরা এখনো অন্ধকারেই হাতড়ে ফিরছি। এখনো পর্যন্ত ভ্যাকসিন হাতে আসেনি। আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। কখন হাতে এসে পৌঁছাবে, তাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ওষুধের জন্য নেই কোনো নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপশন। আছে শুধু একটাই, যার নাম আতঙ্ক। আর এই আতঙ্কের মাঝেই আমাদের বসবাস ও যুদ্ধ। আমরা যুদ্ধ করেই বেঁচে আছি ও থাকব। আমাদের প্রধান অস্ত্রের নাম সচেতনতা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই এ যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের চেয়ে আমাদের দায়িত্ব কিছুটা হলেও বেশি বিশেষত বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে। সরকার তার দায়িত্ব কতটা পালন করছে, সেদিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রতিটি পরিবার যদি সচেতন হতে পারে, তাহলে ৫০ শতাংশ প্রতিরোধ নাগালের মধ্যে এসে ধরা দেবে। একই সঙ্গে অ্যামিউনিটি বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগী হওয়াটাও জরুরি। বস্তুত শক্তিশালী অ্যামিউনিটির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকায় করোনার সংক্রমণ বিস্তারে বিশ্বে মৃত্যু পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এ মহামারি শেষ হওয়ার ধারে কাছেও নেই। সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, আমরা চাই এ মহামারির অবসান হোক। আমরা বেঁচে থাকতে চাই। তবে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে পরিস্থিতি কাটছে না। করোনা মোকাবিলায় অনেক দেশ উন্নতি করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটি দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে। বিশ্বজুড়ে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা কোটি পার হয়ে গেছে। কয়েকটি দেশ নতুন করে লকডাউন পদক্ষেপ নেওয়ায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। বর্তমানে আমেরিকান অঞ্চলগুলোতে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া ও আফিকায়ও এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব দেশে জুলাই মাস শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছানোর কথা ভাবা যাচ্ছে না।

ডব্লিউএইচওর মতে, এক কোটি আক্রান্ত আর পাঁচ লাখ মৃত্যুর পরও জাতীয় ঐক্য ও বৈশ্বিক সংহতির অভাব বিষয়টিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। করোনার বিস্তার রোধে সহায়তা না করে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিস্থাপনের প্রতিযোগিতায় বিশ্ব আজ বিভক্ত হয়ে সংঘাতের পথে এগিয়ে চলেছে। এমতাবস্থায় ভয়াবহতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দিতে পারে; যা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশার বাইরে। আমরাও মনে করি, বিশ্বকে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। মহামারির হাত থেকে বাঁচাতে হবে এই সুন্দর পৃথিবীকে। করোনা পরাজিত হলে সভ্যতার জয় হবে। আর সভ্যতার জয় হোক—এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা,সম্পাদকীয়,সংক্রমণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close