সম্পাদকীয়

  ০১ জুলাই, ২০২০

লঞ্চ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক

যদিও আষাঢ় মাস, ছিল না মেঘ-বৃষ্টি-ঝড়ের তাণ্ডব। নদী ছিল শান্ত। তবু লঞ্চডুবিতে মারা গেলেন ৩২ জন। কিন্তু কেন? এই কেন এর কোনো জবাব এ পর্যন্ত মেলেনি। বিভিন্ন সময়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তবে তদন্তের ফলাফল জানতে পারেনি কেউ। ডিপফ্রিজে চলে গেছে প্রায় প্রতিটি তদন্তের ফল। অথবা তদন্তেই শেষ হয়েছে কার্যক্রম। কাঠগড়ায় উঠতে দেখা যায়নি কখনো। সম্ভবত এ দেশে এটাই নিয়ম। আর এই নিয়মের কারণেই প্রতি বছর জীবন বলি দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সম্প্রতি এ রকম একটি ঘটনায় বলি হয়েছে বহু মানুষ। এ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে ৩৪ জনের। ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ রুটে চলাচলকারী লঞ্চ ‘মর্নিং বার্ড’-ডুবির পর একের পর এক লাশ ভেসে ওঠে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে। স্বজনদের আহাজারি আর বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে চারপাশের পরিবেশ।

গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দোতলা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাট কাঠপট্টি ঘাটে ভেড়ানোর আগমুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ নামের লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক ছোট মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। পরে যাত্রীদের উদ্ধারে নামে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার ডুবুরিরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর আশঙ্কা যদি সত্য হয়, তাহলে বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। তাই তদন্ত সেভাবেই অগ্রসর হওয়া দরকার। তদন্তে কোনো রকম গাফিলতি ক্ষমার যোগ্য নয়। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে এবং হত্যাকারী খুনের অপরাধে অপরাধী। আমরা তাই এই দুর্ঘটনা বা হত্যার তদন্ত যাতে নিরঙ্কুশ সততার ওপর দাঁড়িয়ে করা হয়; সে দাবি উত্থাপন করতেই পারি।

এ দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা অনেক হয়েছে। তদন্তও হয়েছে। কিন্তু তদন্ত পরবর্তীকালে কোনো ধরনের ফলাফল বেরিয়ে আসতে দেখিনি। কেবল পানিপথেই নয়, স্থলপথেও অনেক দুর্ঘটনার কথা জানি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই চিত্র দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই তদন্ত এবং পরবর্তী ফলাফলের প্রতি আস্থা রাখার ব্যাপারে দোদুল্যমানতায় ভুগতে হয়। এ দেশের মানুষ আর সেই দোদুল্যমানতায় ভুগতে চায় না। তারা ভবিষ্যতে আর এ ধরনের মৃত্যুদৃশ্য দেখতে চায় না। একদিকে করোনার তান্ডবে দিশাহারা। প্রতিদিনই স্বজন হারানোর কান্নায় ভারী হয়ে আছে আমাদের পরিবেশ। তাকে আরো ভারী করে তুলল এই লঞ্চডুবির ঘটনা। আমরা জানি না কবে আমাদের বোধের উদয় হবে! কবে আমরা মানবিক হতে পারব। কবে অপরের কষ্টকে নিজের কষ্ট বলে মনে করতে পারব। কবে সামষ্টিকভাবে বেঁচে থাকার কথা ভাবতে শিখব। আমাদের সামান্য ভুল, অবহেলা বা অসচেতনতার কারণে এ ধরনের প্রাণহানির কারণ হওয়া থেকে দূরে থাকতে পারব।

আমরা মনে করি, সব দুর্ঘটনার জন্য সরকারকে একতরফাভাবে দায়ী করাটাও ঠিক হবে না। দায়িত্ব নিজেদের কাঁধেও নিতে হবে। সচেতন হতে হবে। দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করতে হবে। আর সরকারকেও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বকে জাগ্রত করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আইনের শাসন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লঞ্চ দুর্ঘটনা,তদন্ত,সম্পাদকীয়,দুর্ঘটনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close