সম্পাদকীয়

  ২৭ জুন, ২০২০

অর্থনীতির ক্ষতি পোষাতে ব্যয় সংকোচন জরুরি

করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হবে, এর আর্থিক জের ১২ ট্রিলিয়ন ডলারে (এক ট্রিলিয়ন সমান এক লাখ কোটি) গিয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই ক্ষতি পুষিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি কবে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ও দিকনির্দেশনা এখনো আসেনি। ২০২০ সালের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে এ পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। এর আগে গত এপ্রিলে সংস্থাটি জানায়, ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে। এখন তারা তা সংশোধন করে বলছে, করোনায় চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতির সংকোচন হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

আইএমএফ বলছে, বিশ্বের ২০১৯ সালের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরো দুই বছর সময় লাগবে। তারা সতর্ক করে বলেছে, সরকারগুলো তাদের ভঙ্গুর অর্থনীতির আর্থিক সহায়তা অপসারণের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। করোনার কারণে চলতি অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে হারে মন্দা দেখা দেবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, প্রথম ছয় মাসে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে আরো অনেক বেশি। তবে এ অবস্থা চিরস্থায়ী হবে না। তবে কেটে উঠতে সময়ের প্রয়োজন হবে। গতি মন্থর হওয়ার কারণে এ সময়ের প্রয়োজন পড়বে। বিশ্বের কোনো বৃহৎ অর্থনীতিই করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পাবে না। সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও চলতি বছর ৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হবে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া শুধূ ইউরো ব্যবহার করে—এমন দেশগুলোর সংকোচন হবে ১০ শতাংশের বেশি। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫ ও ইতালির ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। আইএমএফের ধারণা, জাপানের উৎপাদন কমবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আর চীনের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি হবে ১ শতাংশ।

গত কয়েক দশক এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি চীন। শুধু তাই নয়, চলতি বছর ৯৫ শতাংশ দেশের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পাবে এবং মাথাপিছু আয় ৯৫ শতাংশই হবে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। ভারতও এর বাইরে থাকতে পারেনি। আইএমএফের মতে, ভারতের অর্থনীতিও সংকুচিত হবে ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ সম্পর্কে আইএমএফের নির্দিষ্ট কোনো মতামত না থাকলেও বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির বাইরে নয়। তাকেও এ চাপ বহন করতে হবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ এত দিন ইমার্জিং টাইগার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গত কয়েক দশকে শিশু স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও কোভিড-১৯ মহামারির আঘাতে দক্ষিণ এশিয়ার লাখ লাখ পরিবার আবার দারিদ্র্যে নিমজ্জিত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। বিশেষ করে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যার আবাস এ অঞ্চলে মহামারি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকায় শিশুসহ ৬০ কোটি মানুষের ওপর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘের এই সংস্থা।

আমরা মনে করি, অবস্থা সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অনুকূলে নয়। তাই আমাদের কঠিন হিসাবের মধ্য দিয়ে চলার সময় এসেছে। ব্যয় সংকোচন নীতিই হতে পারে এই যুদ্ধজয়ের একটি হাতিয়ার। কেবল সরকারের ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিটি পরিবারের জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও এই নীতি মেনে চলাটাই আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আসুন, এখন থেকেই আমরা মিতব্যয়ী হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অর্থনীতি,সম্পাদকীয়,ব্যয় সংকোচন,করোনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close