সম্পাদকীয়

  ২৬ জুন, ২০২০

করোনার মধ্যেও রিজার্ভের রেকর্ডকে সুস্বাগতম

চারপাশে কেবল দুঃসংবাদ। করোনার জাঁতাকলে পড়ে বিপর্যস্ত পৃথিবী। একদিকে মৃত্যুর আতঙ্ক। পাশাপাশি মন্দায় আক্রান্ত পৃথিবী। কর্মজীবী মানুষ হারাচ্ছেন কর্ম। হচ্ছেন বেকার। দ্বিমুখী আক্রমণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ দিশাহারা। সর্বত্রই হতাশার চিহ্ন। এতসব হতাশার মাঝেও বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি সুখবর কিছুটা হলেও আন্দোলিত করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ভেঙে ৩৫ বিলিয়ন (৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) ছড়িয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। মূলত কাক্সিক্ষত রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি, আমদানি খরচ কমে যাওয়া এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে বৈদেশিক সহায়তা যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভের এমন ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। রিজার্ভ বৃদ্ধি আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ বটে। তবে এ দুঃসময়ে তা সতর্কভাবে খরচ বা বিনিয়োগের ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইতোপূর্বে রিজার্ভ বাড়ার ক্ষেত্রে রফতানি ভালো ভূমিকা পালন করলেও গত কয়েক মাসে রফতানি বাণিজ্য অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে। করোনার আগে থেকেই রফতানি বাণিজ্যে মন্দার প্রভাব পড়ে। আর করোনা আসার পর তা ক্রমশ খারাপের দিকে ধাবিত হয়। গত বছরের তুলনায় গত মে মাসে এক লাফে রফতানি আয় কমেছে ৬২ শতাংশ। তথ্যমতে, মে মাসে আয় হয়েছে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

এতসব হতাশাব্যঞ্জক খবরের মাঝেও হতাশাকে ত্যাগ করার কথা বলছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বলছেন, রিজার্ভকে আরো বাড়াতে হবে। আর এর জন্য বাজার থেকে ডলার কিনে আরো বেশি রিজার্ভ গড়তে হবে। তাতে বাজারে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়বে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে এ রিজার্ভ কাজে লাগানো যাবে। পাশাপাশি তারা আরো বলেছেন, রিজার্ভ বাড়লেও তা খরচ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ সামনে আরো বড়মাপের বিপদ আসতে পারে। করোনা পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে, দেশের অর্থনীতি ততটাই খারাপের দিকে যাবে। একই সঙ্গে মুদ্রার মান বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের মতে, ডলারের তুলনায় টাকার মান কিছুটা কমাতে হবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়বে। মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বাড়বে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছেও নগদ টাকার পরিমাণ বাড়বে আর এর মাধ্যমে একটি সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।

বর্তমান রিজার্ভ প্রসঙ্গে বলা যায়, আন্তর্জাতিক মানদন্ডে একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়, সেখানে বাংলাদেশের কাছে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে, তা দিয়ে আট মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তথ্যটি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য একটি ভালো খবর। তবে সাবধানের মার নেই। আমাদের এই রিজার্ভ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য সরকার ইতোমধ্যেই এই নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা দেখিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে সরকার যে সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে তা যেন অব্যাহত থাকে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। কেবল বিদেশ সফরের ক্ষেত্রেই নয়, দেশের অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের অপচয়ের কোনো শেষ নেই। এখানেও লাগাম টেনে ধরার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে আগামী দিনের দুর্যোগের ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে। আমরা আশা করব, সরকার তা করবে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close