সম্পাদকীয়

  ২৫ জুন, ২০২০

করোনা মোকাবিলায় দরকার প্রতিরোধ ক্ষমতা

সভ্যতার ওপরের দিকের মানুষগুলোকে করোনা ধরাশায়ী করতে পারলেও তলানিতে পড়ে থাকা মানুষগুলোকে কাবু করতে পারেনি। বাস্তব চিত্র সে বিষয়টি এবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। নিম্ন আয়ের মানুষ ও বস্তিবাসীর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কম এমনটাই বলছেন এ-সংক্রান্ত কাজে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কেন? কেন নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে সংক্রমণের হার কম, সে বিষয়ে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। বিশেষজ্ঞরা বলছে, বিষয়টি রহস্যজনক। এ রহস্য উদ্ঘাটনে গবেষণা জরুরি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের তুলনায় নিম্ন আয়ের ও বস্তিবাসীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। পরিশ্রমী জীবনযাপন তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এ পর্যায়ে এনেছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে তারাও কাজ শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ফলাফল আকারে বলার মতো পর্যায়ে আসেনি। তবে যতটুকু পর্যবেক্ষণে এসেছে তাতে দেখা গেছে, বস্তিবাসী যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে করোনা পজিটিভের হার খুবই কম। তথ্যমতে, আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এর কারণ খুঁজে দেখার কাজ শুরু করেছেন। নি¤œ আয়ের মানুষ শারীরিক পরিশ্রম বেশি করায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলে যে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো যখন কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি, তাই দৃঢ়ভাবে বিষয়টিকে সমর্থন করা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি আবার উড়িয়ে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।

তবে এ কথা সত্য যে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই শুধু নয়; মানুষ ইচ্ছা করলে যেকোনো বিষয়ের ওপর তার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। আমরা জেলে সম্প্রদায়কে লক্ষ করলেই এর প্রমাণ পেতে পারি। এই পেশাজীবী মানুষরা সারা দিন পানিতে কাজ করার পরও তাদের ঠান্ডায় কাবু হয়ে অসুস্থ হতে দেখা যায় না। বলা হয়, তারা অভ্যস্ত তাই। অবিরত পানিতে থাকতে থাকতে ঠান্ডার বিপরীতে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় উপনীত হয় যে, সাধারণ মানুষের তুলনায় তা বহু গুণে বেশি। এ শিক্ষা আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে অর্জন করেছি। এ ক্ষেত্রে কোনো গবেষণা হয়েছে কি না জানা নেই। কেবল শারীরিক পরিশ্রমই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তেমনটা নয়। বাড়ানোর জন্য পদ্ধতিগত বিষয়াদিও আছে। একটি মানবসৃষ্ট, অপরটি প্রকৃতিগতভাবে অর্জন। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হতে পারে; যা আমাদের জ্ঞানের আওতায় আনাটাই জরুরি। তাহলে অনেক কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে।

সমাজ বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেছেন, ‘শুরুর দিকে আমরা অনেকটা ভীতসন্ত্রস্ত ছিলাম। কারণ যদি কোনোভাবে এসব বস্তিতে ব্যাপক সংক্রমণ হয়, তাহলে তা ঠেকানো খুব কঠিন হয়ে পড়বে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বস্তিতে আইসোলেশন কার্যকর করা খুবই কঠিন। তবে আমাদের আশঙ্কা আশঙ্কাই থেকে গেছে। বাস্তবে এখন পর্যন্ত তেমন উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে আউটব্রেক হয়নি। এটি আমাদের জন্য একটি ইতিবাচক দিক বলেই আমরা মনে করি।’ একই সঙ্গে আমরাও মনে করি, অবশ্যই এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে এর পেছনে কোনো না কোনো ইতিবাচক কারণ রয়েছে; যা উদ্ঘাটন করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। আর রাষ্ট্র সে দায়িত্ব নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close