সম্পাদকীয়

  ২৩ জুন, ২০২০

আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক

আজ সেই ২৩ জুন। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আম্রকাননে অস্তমিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। ১৯২ বছর পর একই দিনে বাংলার মানুষের মুক্তি আর অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। পুরান ঢাকার বিখ্যাত রোজগার্ডেনে এ দলটির জন্ম লাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। গৌরব ও ইতিহাসের নানা বাঁক পেরিয়ে আজ ৭১ বছরে পা দিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী আর বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ। বর্তমানে যার নেতৃত্বে রয়েছেন জাতির জনকের সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজগার্ডেনে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতিকে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছে এই সংগঠনটি। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক এবং কারাবন্দি তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৫২ সালে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছরই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ১৩ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রতিষ্ঠা হলেও ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অবিচল থাকার প্রয়াসে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ফলে সংগঠনের নতুন নাম হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের পর দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদল সেনা অফিসারের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলি করে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে পিতার হাতে গড়া দলকে পুনরায় সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর থেকে ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয় লাভের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোটের কাছে হেরে যাওয়ার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের মাধ্যমে যে গৌরব হারিয়ে গিয়েছিল, তা পুনরুদ্ধার করছে তার সরকার। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী তার প্রজ্ঞা ও সাহসিকতার ওপর ভর করে দেশকে টেনে তুলেছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এই মহান নেত্রী।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় অস্থির মানুষের জীবন। যার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। আর এই দুর্যোগ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা ও তার সরকার এরই মধ্যে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। মনে রাখতে হবে, অতীতের মতো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, সর্বশেষ সামরিক স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রতিটি অর্জনে নেতৃত্বদানকারী একটিই রাজনৈতিক দল, তা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের প্রত্যাশা, বাঙালি জাতির প্রতিটি অর্জনের দাবিদার প্রাচীন ও সুবিশাল এ রাজনৈতিক দলটির অগ্রযাত্রা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থাকুক।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close