সম্পাদকীয়

  ২২ জুন, ২০২০

গোদের উপর বিষফোঁড়া ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল

একদিকে করোনার হামলায় নতজানু সভ্যতা। দেশে দেশে দিশাহারা মানব সম্প্রদায়। কর্মহীন হয়েছে অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে বেসরকারি পেশাজীবী মানুষ একটি মহাতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন। ক্রমেই অর্থাভাব তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে। বেতন কমলে বা না থাকলেও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। করোনা মোকাবিলায় জীবনবাজি রেখে লড়ছে মানুষ। সরকারও মানুষের কল্যাণে নানা ধরনের সহযোগিতাসহ এগিয়ে এসেছে এবং এগিয়ে চলেছে। ঠিক এ রকম একটি সময়ে বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল সবাইকে স্তম্ভিত করেছে। আর বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বহীন আচরণের কারণেই সরকারকে পড়তে হয়েছে কঠিন সমালোচনার মুখে।

মিটার রিডাররা অনুমাননির্ভর বিল করার কারণেই ভুতুড়ে বিলের সৃষ্টি হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দাবি করলেও তা মেনে নিতে পারছেন না সমাজে বসবাসরত সাধারণ মানুষ। কেননা, এই দুর্যোগকালীন তাদের জন্য এ ভুতুড়ে বিল গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। মোদ্দাকথা হচ্ছে, তাদেরকেই এ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে গ্রাহকের ভোগান্তি বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক বিল সমন্বয় করার ঘোষণার পরও বেশির ভাগ গ্রাহকের বিল সমন্বয় করা হয়নি। আবার কোনো কোনো এলাকায় ভুতুড়ে বিল কমিয়ে দেওয়ার কথা বলে মিটার রিডাররা দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তথ্যমতে, গত ৩ মাসে রাজধানীসহ সারা দেশের সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ভুতুড়ে বিল হস্তান্তরের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়ে কোম্পানিগুলো সমন্বয়ের আশ্বাসও দিয়েছে। তবে আশ্বাস মোতাবেক কাজ হয়নি। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, চলতি মাসে তারা যে বিল হাতে পেয়েছেন, তাতে বিল সমন্বয় করা হয়নি। ইতোমধ্যে অনেক গ্রাহক বিল পরিশোধ করেছেন। তাদের বিল আদৌ সমন্বয় করা হবে কি নাÑ এ নিয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ সংশয় দূর করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। তারা নিশ্চয় দায়িত্বে অবহেলা করে সরকারকে কোনো বিব্রতকর অবস্থায় নিয়ে দাঁড় করাবেন নাÑ এটাই আমাদের বিশ্বাস। আমরা মনে করি, দেশের এ দুর্যোগকালীন অবস্থায় সরকারের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করা কারো জন্য দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করবে না।

অন্যদিকে হঠাৎ ভুতুড়ে বিলের কারণে অনেক গ্রাহক এখন পর্যন্ত বিল পরিশোধ করতে পারেননি। রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ডিপিডিসিও এবং ডেসকোর কর্মকর্তারাও ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। পল্লীবিদ্যুৎ বোর্ড, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির কর্মকর্তারাও ভুতুড়ে বিলের সত্যতা স্বীকার করে সমন্বয়ের আশ্বাস দিয়েছে। তবে সমন্বয় কবে নাগাদ কার্যকর হবে; সে ব্যাপারে কোনো ঘোষণা আসেনি। বেশির ভাগ গ্রাহক মনে করেন, বিল নিয়ে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। করোনার মধ্যেও মিটার রিডাররা দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। অস্বাভাবিক বিল কমিয়ে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ দাবি করছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, বিষয়টি দুর্নীতিবাজরা পরিকল্পিতভাবেই করেছে। আর তাদের এ কর্মকান্ড সরকারের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণœ করছে। ইতোপূর্বে করোনাকালে সরকার বিলম্বে বিল পরিশোধের জরিমানা মওকুফ করে। করোনার দুর্যোগকালে সরকার দেশের মানুষকে যেটুকু সুবিধা দিয়েছে, ভুতুড়ে বিল যেন এক টন দুধে একফোঁটা চনা দিয়ে তাকে বিপর্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করেছে। আমরা মনে করি, জরুরিভিত্তিতে এখান থেকে বেরিয়ে আসাটাই হবে প্রকৃত নাগরিকের কাজ।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রতিদিনের সংবাদ,সম্পাদক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close