সম্পাদকীয়

  ১৮ জুন, ২০২০

সুখ ও দুঃখকে বরণ করেই বাঁচতে হবে

চারপাশে আগ্রাসী করোনা। মহামারির আতঙ্কে ঢেকে আছে পৃথিবী। চারপাশে কেবল মৃত্যুর পদধ্বনি। এখনো কোনো ইতিবাচক সফল চিকিৎসায় পৌঁছাতে পারেনি সভ্যতা। নিজেকে সচেতনতার চাদরে ঢেকে রাখাই একমাত্র ভরসা। লড়ছে সবাই। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ করোনা ঠেকাতে তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজ্ঞানীরা সফলতার দাবি করলেও এখনো নির্দিষ্ট কোনো ওষুধের নাম বেরিয়ে আসেনি। আসেনি ভ্যাকসিনের সাফল্যগাথা। কোনো কোনো দেশে সংক্রমণের মাত্রা কমে এলেও মাত্রা বেড়েছে এমন দেশের সংখ্যাও কম নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ এখন ঝুঁকিপ্রবণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এখন সেই ঝুঁকির মধ্যে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর গত মঙ্গলবার প্রথম এক দিনে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এক দিনে ৫৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্য বেড়ে হলো ১ হাজার ২৬২ জন। এ ছাড়া আরো ৩ হাজার ৮৬২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৯৪ হাজার ৪৮১ জনে। তবে এ সময় ২ হাজার ২৩৭ জন সেরে ওঠায় সুস্থ হয়েছেন ৩৬ হাজার ২৬৪ জন। সংবাদটি আমাদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। আমরা যেন একটি ঘোরের মধ্যে বসবাস করছি। এখান থেকে কবে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলাও সম্ভব নয়। তবে বাস্তবতা হলো, বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন আমাদের দুঃখকে বরণ করে সুখের অন্বেষায় এগিয়ে যেতে হবে।

এত দুর্যোগের মধ্যেও আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা যে নেই, তাও নয়। বিশ্বশান্তি সূচকে (জিপিআই) বাংলাদেশ গত বছরের চেয়ে আরো চার ধাপ এগিয়ে তালিকার ৯৭তম স্থানে উঠে এসেছে। গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১তম। ১৬৩ দেশের তালিকায় প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ১৩৯তম এবং সার্কভুক্ত আরেক বড় দেশ পাকিস্তান তালিকার ১৫ নম্বরে স্থান পেয়েছে। সবচেয়ে নিচের অবস্থানে আফগানিস্তান। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে বসবাসকারী মানুষ কখনোই কোনো দুর্যোগকে সমীহ করে চলেনি। তারা সবসময়ই সব দুর্যোগকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেই এগিয়েছে। আবার এ কথাও সত্য যে, দুর্যোগের মধ্যে যাদের বেড়ে ওঠা, তাদের আবার ভয় কিসে! তাই এ জাতি কোনো দুর্যোগকে ভয় করে না। স্বাগত জানিয়েই তাকে মোকাবিলায় অভ্যস্ত। আমরা অনেকের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে পারি। কিন্তু আমাদের সাহস এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা যেকোনো দেশের যেকোনো মানুষের চেয়ে বহু গুণে বেশি। আর সে কারণেই আমরা এখনো ভেঙে পড়িনি। পড়বও না। ইতিহাস সে কথাই বলে।

সম্ভবত বাংলাদেশ এখন করোনা সংক্রমণের পিক-এ অবস্থান করছে। দেশে এক দিনে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশের ৬১ ল্যাবরেটরিতে রেকর্ডসংখ্যক ১৮ হাজার ৪০৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাঝে পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭ হাজার ২১৪টি নমুনা। সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৬২ জন। এর মাঝে ৫৩ জন মারা যায়। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে বলা হয়, গত মঙ্গলবার প্রতি মিনিটে শনাক্ত হয়েছে তিনজন এবং প্রতি ঘণ্টায় দুজনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমরা মনে করি, এটাই এ দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং সর্বোচ্চ মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এবার ভাটিতে নামার পালা। সচেতনতাই করোনার আগ্রাসনকে রুখে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরা সচেতন আছি এবং থাকব—এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,সুখ ও দুঃখ,মহামারি,করোনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close