সম্পাদকীয়

  ১৭ জুন, ২০২০

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করেই বাঁচতে হবে

করোনার আগ্রাসন আমাদের মধ্যে শুধু আতঙ্কের জন্ম দেয়নি, তৈরি করেছে মনোবল। শিখিয়েছে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার মন্ত্র। মানব সম্প্রদায় এত দিনে বুঝে গেছে সংকট মোকাবিলা করেই তাদের বাঁচতে হবে। এজন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছে। এ সংকটকে বলা হচ্ছে, বর্তমান সময়ে দেখা সবচেয়ে বড় সংকট। সামনের কয়েক সপ্তাহে বিশ্বনেতৃত্ব যে সিদ্ধান্তগুলো নিতে যাচ্ছে, তা সামনের বছরগুলোতে বিশ্বের রূপরেখা নির্ধারণ করে দিতে পারে। এগুলো যে শুধু আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে, তা নয়। আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিকেও বদলে দিতে পারে। আর সে কারণেই আমাদেরও খুব দ্রুত ও স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপসমূহের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। এ মুহূর্তে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে করোনা-ঝড় পরবর্তীকালে আমরা কোন ধরনের বিশ্বে বসবাস করতে চাই। তবে এ কথাও সত্য যে, এই বিপদ এক দিন শেষ হয়ে যাবে। বেশির ভাগ মানুষই টিকে থাকবে। কিন্তু আমরা এক ভিন্ন পৃথিবীতে বসবাস করব। দেখতে পাব পরাশক্তির ভারসাম্যেরও পরিবর্তন।

করোনা-পরবর্তী বিশ্ব ক্ষুধাময় হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ আসন্ন। ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যের নিম্নসীমায় চলে যাবে। বিশ্বের অর্ধেক মানুষ কাজ হারিয়ে ফেলতে পারে। এক দশমিক ছয় বিলিয়ন মানুষ জীবিকা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে আট দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। ১৯৩০ সালের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। সে কারণে করোনা-পরবর্তী বিশ্ব ক্ষুধাময় হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অগ্রগতির পরও বর্তমানে সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসের কারণে অত্যন্ত সংকটের মধ্যে আছে। তিনি বলেন, এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে করোনাভাইরাস মহামারিটি বিশ্বজুড়ে অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ এবং যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

বিশ্বজুড়ে আজ একটি প্রশ্ন ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, জীবন আগে না জীবিকা আগে? দুই পক্ষের পাল্লাই সমান জোরালো। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, একটি অপরটির পরিপূরক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা-অক্রান্ত পৃথিবীতে ১৬০ কোটি মানুষ জীবিকা হারিয়ে ফেলতে পারে। সুতরাং; নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে, এদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমাদের জানা না থাকলেও অনুমান করা যায়। তবে এ কথা বলা যায়, চাকরিচ্যুতদের জন্য সংকট আরো ঘণীভূত হওয়ার দিকেই এগিয়ে যাবে। আর এ মুহূর্তে বাংলাদেশকেও সে কথা মাথায় রেখে আগামী দিনের পরিকল্পনায় নামতে হবে। আমাদের কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এ মুহূর্ত থেকে এই উৎপাদনের দিকে আরো মনোযোগী হওয়াটা খুবই জরুরি। পাশাপাশি বণ্টনব্যবস্থাতেও আনতে হবে এক যুগোপযোগী ব্যবস্থা। উৎপাদন ও বণ্টনব্যবস্থাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলে সম্ভবত করোনা-পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় আমরা সফল হয়ে আবার সোজা হয়ে চলার পথ খুঁজে পাব বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা জীবিকায় থেকে জীবন বাঁচাতে চাই।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বৈশ্বিক সংকট,সম্পাদকীয়,করোনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close