সম্পাদকীয়

  ১৬ জুন, ২০২০

পরীক্ষার বিড়ম্বনার দ্রুত অবসান হোক

দেশে করোনা সংক্রমণের সঙ্গে বাড়ছে করোনা পরীক্ষার নানা বিড়ম্বনা। কোভিড-১৯ রোগী থেকে সাধারণ মানুষ কিংবা চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী সবাই এর ভুক্তভোগী। কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের বেশকিছু সীমাবদ্ধতা আর সমন্বয়হীনতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া উচিত। কারণ দেশে যে হারে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে আতঙ্কিত মানুষ। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার বিড়ম্বনা সার্বিক অবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলবে। এমনিতে করোনা পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ফল পেতে দেরি হওয়া থেকে শুরু করে এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও তোলা হচ্ছে নানা প্রশ্ন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, পর্যাপ্ত সব প্রস্তুতি আছে তাদের। তারপরও মানুষের ভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্টদের আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।

দেশে করোনা রোগী শনাক্তকরণে পরীক্ষাগার ও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু তাতেও কমছে না পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ফলাফল নিয়ে জটিলতা। বিশেষ করে পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়ার পর সময়মতো ফল পাচ্ছেন না অনেকে। সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ-সাত দিন সময় লাগছে, যা গোটা পরিস্থিতিকে সংকটময় করে তুলছে। অন্যদিকে এমন চিত্রও দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে গিয়ে নিরাময়ের বদলে সংক্রমণের কারণে আরো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণের এ সময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত ননএমন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাতে আক্রান্ত হওয়া এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ফলে রোগীদের মধ্যেও হাসপাতাল সম্পর্কে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রামক রোগের হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে। রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তারাও ভীত থাকেন। হাসপাতালে গিয়ে একজন করোনা নেগেটিভ রোগীর করোনা পজিটিভ হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি কীভাবে আক্রান্ত হলেন, তা নিয়ে কথা হতে পারে কিন্তু এটি অস্বাভাবিক নয়। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালগুলোয় এ ধরনের ঘটনা যেমন ঘটতে পারে, তেমনি অনেক সময় চিকিৎসকের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ হতে পারে। এজন্য যেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হবে, সেখানে অন্য রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়াই ভালো। যদিও বর্তমান বাস্তবতায় এটি আদৌ সম্ভব নয়। কারণ অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আমাদের চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। ফলে এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।

করোনাভাইরাস থেকে দেশ-জাতির মুক্তি কবে ঘটবে কিংবা তার অবসান কবে হবে, তা আমরা কেউই জানি না। সেক্ষেত্রে করোনাক্রান্তদের পাশাপাশি অন্য রোগীরাও যাতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা ও নানা প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও অব্যাহত রয়েছে অনেক কার্যক্রম। আমরা আশা করি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। তবে এ মুহূর্তে সংক্রমণ রোধে চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। করোনার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা অবহেলার শিকার হবে, তা যেন না হয়; সেদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষার বিড়ম্বনা থেকেও ভুক্তভোগীদের রক্ষার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে—আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নমুনা পরীক্ষা,কোভিড-১৯,করোনা,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close