সম্পাদকীয়
মানুষ বাঁচানোর বাজেট সফল হোক
প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে ‘মানুষ বাঁচানোর বাজেট’ বলে অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, মানুষকে রক্ষা করা জন্য এবারের বাজেট করা হয়েছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর ভাবনাকে সামনে রেখেই এই বাজেট। তার ভাবনায় রয়েছে, আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। তাই আয়ের অপেক্ষা না করে খরচের হিসাব করতে হয়েছে সবার আগে। এছাড়া এবারের বাজেট কোনো গতানুগতিক বাজেট নয়।
অর্থমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, অতীতের অর্জন ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দেশি-বিদেশি ইকোনমিক থিংক ট্যাংকের মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস, তারা ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার পুরো বাজেট বাস্তবায়নে সরকার সক্ষম হবে। আমরাও সরকারের এই বিশ্বাসের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে চাই, সফলতাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বাজেটকে বলছেন, ‘ব্যবসাবান্ধব’। তাদের মতে, অপ্রদর্শিত অর্থবিনিয়োগের সুযোগ অর্থ পাচারের প্রবণতা কমাবে। তবে এখানে একটি কথা বলতেই হয় যে, অপ্রদর্শিত আয়ের মালিকেদের চিন্তার ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন আসাটাও জরুরি। তাদের ভাবতে হবে, দেশ না বাঁচলে তারাও বাঁচবেন না। দেশ বলতে এখানে দেশের মানুষকেই বোঝানো হয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এখন এক মহাসংকট কাল পার করছি। এ সময় সরকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সবাই কামনা করে। এই অংশগ্রহণ একদিকে দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
অপরদিকে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির মতে, টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে কোনো লাভ হয় না। পাশাপাশি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার করা হয়। স্বাধীনতার পর সবসময় এ সুযোগ দেওয়া হলেও মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সিপিডির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে কেউ কালো টাকা সাদা করেন না।
কথাটি সত্য। কিন্তু পাশাপাশি আরো একটি সত্য, পরিবেশ ও পরিস্থিতি মানুষের চিন্তায় পরিবর্তন ঘটায়। আমরা মনে করি, বর্তমান এই সংকটময় পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সবার চিন্তায় একটি বড়মাপের পরিবর্তন সূচিত হবে এবং অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকেরা সরকারের এই আহ্বানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দেশ ও জাতিকে রক্ষার কাজে এগিয়ে আসবেন।
পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বাজেটকে ইতিবাচক বললেও উৎসে কর না বাড়ানো এবং নগদ প্রণোদনায় কর অব্যাহতির দাবি তুলেছেন। রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ সেক্টরের কার্যক্রম বেড়ে যাবে। প্রচুর বিনিয়োগ হবে। দেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ সহজ করা হয় তাহলে বিদেশে টাকা পাচারের প্রবণতাও কমে আসবে।
পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজেটকে করোনা অভিঘাত বিবেচনায় সময়োপযোগী বলে আখ্যায়িত করে। আমরাও মনে করি, সার্বিকভাবে দুর্যোগ চলাকালে এই বাজেট সাধারণ মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করবে যদি দেশের চালিকাশক্তিগুলো সততার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে।
পিডিএসও/হেলাল