সম্পাদকীয়

  ১৪ মার্চ, ২০২০

মুজিববর্ষের বিশেষ উপহার প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে

যোগাযোগব্যবস্থায় বাংলাদেশ প্রবেশ করল এক নতুন যুগে। গত বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হলো দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। সূচনা হলো এক নতুন অধ্যায়ের। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-পাচ্চর-ভাঙ্গা রুটে নবনির্মিত বিশ্বমানের এই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে উঠেছে সময়ের একটি মাইলফলক। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটি দেশের প্রথম নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে। জাতির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এটি হচ্ছে মুজিববর্ষের একটি বিশেষ উপহার।

এ উপহার জাতির জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি বললে বেশি বলা হবে না। এ কাজের জন্য সরকারকে সাধুবাদ এ কারণে যে, এই এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যেকোনো যানবাহন কোনো ধরনের বাধা বা ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই সরাসরি গন্তব্যে যেতে পারবে। অর্থাৎ সময়ের অপচয় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলে পৃথক লেন সুবিধার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

কিছুকাল আগেও ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল স্টিমার বা লঞ্চনির্ভর। গোপালগঞ্জ পৌঁছাতে সময় লাগত টানা ২৪ ঘণ্টা। লঞ্চে সময়ের অপচয় হতো আরো বেশি। বাংলাদেশে উন্নয়নের যে ছোঁয়া লেগেছে, এটিই হচ্ছে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর কথা না বললেই নয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এই সেতুটি কোনো সাধারণ সেতু নয়। এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি একটি দ্বিতল সেতু। নিচ দিয়ে চলাচল করবে রেল। ওপরে চলবে মোটরযান। পদ্মা নদীর মরো একটি খরস্রোতা নদীর ওপর এ ধরনের সেতু নির্মাণে বিরাট ঝুঁকি থাকার পরও সরকার যে সাহস ও পারদর্শিতা দেখিয়েছে— এ দেশের মানুষ অনেক দিন তা মনে রাখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এক্সপ্রেসওয়ে এ দেশের মানুষকে উন্নততর জীবনব্যবস্থায় প্রবেশের স্বপ্ন দেখার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা এখন স্বপ্ন দেখতেই পারি। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি প্রমাণ করেছেন, মানুষকে আপনি স্বপ্ন দেখাতে পারেন। এত দিন যা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর করতলগত ছিল। এখন আপনিও তার অংশীদার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে। এখন মাত্র ২৭ মিনিটে ঢাকা থেকে মাওয়া পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে ৫টি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস, প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীণ। একই সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একটি অংশের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে।

আমরা মনে করি, নানা কারণে দেশে প্রতিদিন লাখ লাখ শ্রমঘণ্টার অপচয় হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ যে সেই অপচয়কে রুখে দিতে, তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। আমরা আশা করি, উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমেও গড়ে উঠুক এ ধরনের এক্সপ্রেসওয়ে। গড়ে তুলতে পারলে শ্রমঘণ্টার অপচয় কমে আসবে। আমাদের কাজে গতি সঞ্চার হবে। আমরা হতে পারব আধুনিক বিশ্বের মতো একটি দেশের সদস্য, যা আমাদের অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এক্সপ্রেসওয়ে,ননস্টপ এক্সপ্রেসওয়ে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close