সম্পাদকীয়

  ১১ মার্চ, ২০২০

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব চাই

সভ্যতার এত বড় পরাজয় সম্ভবত এটাই প্রথম। আর এ পরাজয়ের জন্য অন্য কারো ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। মানুষকেই তার অপকর্মের মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। প্রকৃতি যেন কড়ায়-গণ্ডায় তা বুঝে নিচ্ছে। করোনা আতঙ্কে ধস বৈশ্বিক পুঁজি ও পণ্যবাজারে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ। স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে প্রায় সব দেশ। এক ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা বৈশ্বিক জিডিপিতে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও পড়তে পারে মন্দার কবলে।

এ ভাইরাস এখন আর চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়েছে এশিয়া, ইউরোপসহ পাঁচ মহাদেশের শতাধিক দেশে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এর আগে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক কোনো সংকটই বিশ্বজুড়ে এতটা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারেনি। করোনার ধাক্কায় এখন কাঁপছে পুরো বিশ্ব। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার কারণে এক ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বৈশ্বিক জিডিপি। এখনো চীনের সঙ্গে কোনো দেশের আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক হয়নি। ভালে নেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইতালির অর্থনীতি। দেশগুলোর বিভিন্ন খাতের অর্থনীতিতে নেতিবাচক ধারা প্রবহমান। প্রবহমান এই নেতিবাচক ধারায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত হতে পারে বাংলাদেশও।

এদিকে করোনায় আক্রান্ত খবরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত সোমবার এক দিনে শেয়ারবাজারে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ সূচক পতনের দিনে মাত্র দুটি কোম্পানির দর বেড়েছে, যা আগে কখনো ঘটেনি। দিনটিতে ৯৯ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে। ২০১৩ সালের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসইএক্স। এক দিনেই বাজার মূলধন কমেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে আতঙ্ক। বিশ্ব শেয়ারবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কোভিড-১৯ আতঙ্কে বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন এখন এমনিতেই নিম্নমুখী। ধারাবাহিকতায় চাহিদা কমতে থাকায় ধুঁকছিল জ্বালানি তেলের বাজার। এর মধ্যেই বাজারে নতুন করে বিপত্তির জন্ম দিয়েছে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মধ্যকার আকস্মিক মূল্যযুদ্ধ। ফলে গত সোমবার তেল-বাণিজ্যের ২৯ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দরপতনের রেকর্ড গড়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজার।

১৯৮৭ সালের অক্টোবর ভয়াবহ এক ধসের মুখে পড়ে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার। অন্য বড় বাজারগুলোতেও দেখা গিয়েছিল প্রায় একই পরিস্থিতি। বৈশ্বিক আর্থিক ইতিহাসে দিনটিকে এখন স্মরণ করা হয় ‘ব্ল্যাক মানডে’ হিসেবে। অনেকটা সেই ‘ব্ল্যাক মানডে’রই পুনরাবৃত্তি ঘটল গত সোমবার। আর এ ধসকে আরো ঘণীভূত করেছে তেলের দুই পরাশক্তির মূল্যযুদ্ধ। এদিকে ‘ব্ল্যাক মানডে’র মেজাজ টের পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষ। বাদ পড়েনি বৈশ্বিক খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্যের বাজার। মন্দা মোকাবিলা করতে হচ্ছে খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্যকেও। এ বিষয়ে মুম্বাইভিত্তিক বাজার উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান কেদিয়া অ্যাডভাইজরির প্রধান বলেছেন, পুঁজি, পণ্য ও মুদ্রাবাজারে ব্যাপক ধসের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো আর্থিক বাজারের জন্যই এক অন্ধকার দিন হয়ে থাকল গত সোমবারের দিনটি।

আমরা মনে করি, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসাটা কোনো একক দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। পুরো বিশ্বকে যূথবদ্ধভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। তবে তার আগে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি, আমরা কি প্রকৃতি ও মানব হত্যার পথ থেকে সরে আসতে পারব এবং মুনাফাই একমাত্র লক্ষ্য বলে বিবেচিত হবে না? এই দুয়ের সমাধানের আগে বোধহয় কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবু আমরা আশাবাদী, এক দিন মানুষের বোধদয় হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনাভাইরাস,আতঙ্ক,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close