সম্পাদকীয়

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

চবিতে বৃক্ষনিধন রুখতে এখনই নির্দেশনা চাই

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৃক্ষনিধনের যেন এক মহোৎসব চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ এলাকা থেকে নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে সবুজের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত চার বছরে কেটে সাবাড় করা হয়েছে সাত হাজারেরও বেশি গাছ। সেগুলো পরিবহনের জন্য পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা।

তথ্য মতে, রাস্তা তৈরি হওয়ার পর এই বৃক্ষনিধনের পরিমাণ বহু গুণে বেড়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি গাছ কাটা হচ্ছে। এ হিসাবে গত চার বছরে গাছ কাটা হয়েছে সাত হাজার তিনশোর মতো। ন্যায়-অন্যায় বিচার করার কেউ নেই। প্রকৃত সত্য হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা এর সুযোগ নিচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তা তাদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। কেটে নেওয়া গাছের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছও রয়েছে। যার পরিমাণও ব্যাপক।

প্রতিনিয়ত গাছ কাটার ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে এখানকার জীববৈচিত্র। কিন্তু এ ব্যাপারে বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একেবারেই নিশ্চুপ। কেন এই নীরবতা তা পরিষ্কার না হলেও বলা যায়, চার পক্ষের মধ্যে স্বার্থের সমঝোতার কারণে নির্বিঘ্নে এ মহোৎসব অব্যাহত থাকার সুযোগ পেয়েছে। গত চার বছরের বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসের মূল ফটক দিয়ে কাটা গাছ বের করার অনুমতিও দিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কাটার ব্যাপারে অন্তত ১০টি আইন ও বিধিমালা রয়েছে। বনজসম্পদ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুসারে সরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যেকোনো জমিতে কোনো গাছ থাকলেই তা নিজের ইচ্ছামতো কাটা যায় না। চবি এলাকায় যা চলছে তা স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। আর ক্যাম্পাসের জায়গায় পাহাড় কাটলে তা রীতিমতো একটি বড় অপরাধ। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দফতরের গাফিলতি রয়েছে।

তবে নিরাপত্তা দফতর বলেছে, পাহাড় কাটার বিষয়টি তদারক করা তাদের কাজ নয়। এ কাজ তদারকের দায়িত্ব এস্টেট বা ভূ-সম্পত্তি শাখার। আবার এস্টেট শাখার বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু দুর্গম জায়গায় সব সময় যাওয়া সম্ভব নয়। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব নিরাপত্তা দফতরের।

চবি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা স্ববিরোধিতায় পরিপূর্ণ। তারা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করেছেন, যা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাস্তবতা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়েই কাটা গাছ পাচার হয়েছে এবং সেখানে বেরোনোর ছাড়পত্রও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আমরা মনে করি, এ মুহূর্তেই বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত; বিষয়টির বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত হওয়া দরকার। তা না হলে নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কাটার ফলে ক্যাম্পাস এবং আশপাশের পরিবেশ আর বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়বে। তিন বছর আগেও ক্যাম্পাসে প্রায়ই হরিণের দেখা মিলত। ১০ ফুট দীর্ঘ ডার্ক পাইথনের দেখাও মিলেছে।

তথ্য মতে, একসময় এখানে ৩৫ প্রজাতির সাপ, ১৬ প্রজাতির ব্যাঙ ও দুই শ প্রজাতির পাখির বসবাস ছিল। যার পুরোটাই এখন হুমকির মুখে। প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষা এবং দুর্বৃত্তদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড রুখতে বৃক্ষনিধন বন্ধ করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এ দাবির প্রতি ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চবি,বৃক্ষনিধন,সম্পাদকীয়,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close