সম্পাদকীয়

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগ জরুরি

বায়ুদূষণ কোনো রোগের নাম নয়। তবে এটি অনেক রোগের প্রধান একটি উপসর্গ। বায়ুদূষণ আমাদের যেকোনো রোগ দ্রুত খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি সুস্থ মানুষের দেহে নতুন রোগের জন্মও দিতে পারে। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রশ্নে বা ফুসফুসজনিত অধ্যায়ে মারাত্মক ক্ষতিকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম এই বায়ুদূষণ।

আমরা জানি, ঢাকা মহানগর এখন বিশ্বের দূষণ নগরীর শীর্ষে অবস্থান করছে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়া আমাদের জন্য যেন আর কোনো দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। বিন্দুমাত্র অবহেলা জাতিকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে; যা আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে একটি অশনিসংকেত।

অনেক দেরিতে হলেও সরকার মুখ তুলে তাকিয়েছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি। আর সে বার্তাটি হলো, রাজধানীর বায়ুদূষণ কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ধুলাবালি কমাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ৪৭টি সুইপিং মেশিন কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ধূলিদূষণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হবে বা হবেন তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনাও দিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা যেসব প্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনা অমান্য করবে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

বাস্তব চিত্র বলছে, ধূলিদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে রাস্তা মেরামতের সময় শহরের রাস্তা কাটা এবং বাড়ি নির্মাণের জন্য বালু, কঙ্কর ও অন্য সামগ্রী যেকোনো স্থানে স্তূপ করে রাখা হয়। খোলা অবস্থায় থাকার কারণে এখান থেকে ধুলা বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ হচ্ছে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী পরিবহনের সময় শব্দ ও বায়ুদূষণ হচ্ছে। আন্তমন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ বলছে, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা মেরামত ও শহরে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে অনেক বেশি সময়ক্ষেপণ করা হয়। এ অবস্থায় সড়কগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছে নগরবাসী। এ অবস্থায় দ্রুত সড়ক মেরামতকাজ সম্পন্ন করার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও পরিবেশ রক্ষায় এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শুকনো মৌসুমে বায়ু ও ধূলিদূষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সব সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। সূত্র মতে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের রাস্তা ঝাড়ুর সনাতনী পদ্ধতি এরই মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

আমরা মনে করি, দেরিতে হলেও নগরবাসীর বহু দিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার ইতিবাচক ভূমিকায় যাত্রার শুভসূচনা করেছে। যা নগরবাসীকে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করেছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নির্দিষ্ট গতিতে এ কাজ এগিয়ে যাবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা একটি দূষণমুক্ত মহানগরে বাস করতে সক্ষম হব। তবে সরকারের একার পক্ষে এ নগরকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। নগরবাসীকেও সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে। কেননা, এ শহর কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এটি সামষ্টিকের। এই সামষ্টিকের মধ্য থেকে আমরা কেউ কেউ নগরকে জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতভাবে নগরকে কলুষিত করছি। যেখান থেকে বেরিয়ে আসাটাই হবে একজন প্রকৃত নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেদিন এ বোধোদয় জয়ী হবে, মহানগর ঠিক সে মুহূর্তেই দূষণ নগরীর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বায়ুদূষণ,উদ্যোগ,সম্পাদকীয়,স্বাস্থ্যঝুঁকি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close